দিনাজপুরে বাস স্ট্যান্ডে বিদ্যুতিক তারে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চড়ুই পাখি। দিনাজপুর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটির তারে,এবং গাছের ডালে মসজিদের ছাদের আশেপাশে চড়ুই পাখির ঝাঁক দেখা মিলে,যা সকাল সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় চড়ুই পাখির আনাগোনা কিচিরমিচির ডাক। সন্ধ্যা নামার আগে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে এই চুড়ুই পাখির দল। তারা দলবেঁধে বসে বৈদ্যুতিক খুঁটির,তারে,গাছের ডালে এবং মসজিদের ছাদে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।দিনাজপুর পৌর শহরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দৃশ্যের দেখা মেলে। চড়ুই পাখি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে লোকজন। সাধারণত নির্জন,নিরিবিলি পরিবেশই নিজেদের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেয় চড়ুই পাখি গুলি। কিন্তু শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিকতার মধ্যে এভাবে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নেওয়ায় এলাকাবাসী কিছুটা অবাক।তারা জানান,তিন-চার বছর ধরে এই পাখির দল নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকে। ভোর হতেই এসব পাখি ছুটে যায় খাবারের সন্ধানে। সন্ধ্যার আগে আগে আবার ফিরে আসে। সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের আগলে রাখেন স্থানীয়রা। তাদের যাতে কেউ ক্ষতি না করে,সে বিষয়ও নজরে রাখে সবাই।স্থানীয় লোকজন এবং দোকানদাররা সবাই বলেন বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেই আমাদের কর্মস্থল। এখানে গাড়ির শব্দ,লোকজনের সমাগম বেশি। তার পরও পাখির দল এই এলাকায় থাকে। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখি। এই চড়ুই পাখির দল এখানেই ঘুমায়। সারা রাত থাকে। হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বা ধরলেও ভয় কাজ করে না সন্ধ্যার আগমুহূর্তে পাখিগুলো আসে। সকালে খাবারের সন্ধানে চলে যায়। গাছে,বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকে। এত পাখি দেখে আমরা এখানকার সবাই মুগ্ধ হয়। আমরা দেখি অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে পাখি দেখতে আসেন। ছবি তোলে। সন্ধ্যা থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করে ,তারা বলেন,খাদ্যের সহজলভ্যতা,নিরাপদ প্রাকৃতিক পরিবেশ পাখিদের আবাসস্থল তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে পাখি। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে আবাসস্থল নষ্ট হওয়া ফসলে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পাখিরা শহরমুখী হচ্ছে। সাধারণত এত চড়ুই পাখি গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়।যেমন নদীর ধারে পুকুর পাড়ে,ঝোপঝাড়ে,বাড়ির কোণে চালের খেড়ের ঝপের মধ্যে গ্রামের বাড়ির দেওয়ালের বাঁশের ফুটায় বা গাছের মধ্যে এসব পাখি আবাস গড়ে।দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা,আশিকা আকসর তৃষা বলেন,এখনও গ্রামে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করা হয়। এতে পাখিরা আতঙ্কে থাকে। আবার গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পাখির আবাস্থল। চড়ুই পাখি মাটির বাড়ির খোঁপেও থাকে। এখন গ্রামে মাটির বাড়ি নেই। তাই তারা বসবাসের জায়গা হারাচ্ছে। আবার কৃষিজমির পোকা মাকড় মারা হচ্ছে কীটনাশক দিয়ে। ফলে পাখিরা খাদ্য নিরাপত্তা অভাবের মধ্যে রয়েছে। এ জন্য তারা যেখানে জীবন,খাদ্য ও বসবাসের নিরাপত্তা রয়েছে এমন জায়গা থাকার জন্য বেছে নিচ্ছে। কিন্তু গ্রামে এখন সেই পরিবেশ নেই। গাছপালা কেটে ফেলায় এবং ফসলি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাখির খাদ্য ও আবাসের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই চড়ুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শহর মুখী হচ্ছে।
Posted ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta