গণবার্তা রিপোর্টার:দেশে অর্থনীতিতে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সংস্কার জরুরি। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। কিছু ক্ষেত্রে কষ্ট হলেও সংস্কার করতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
ঢাকার পুরানা পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘ব্যাংক খাতে যে লুটপাট হয়েছে সেটা তো সত্য। আমাদের ব্যাংক খাত থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করলেই এদের অনেককে শাস্তির আওতায় আনা যেত।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, যা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও আমদানি সক্ষমতাসহ সব জায়গায় এ সমস্যার প্রতিফলন রয়েছে। আমাদের সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে। তবে সেটা শুধু আইএমএফের বলা অনুযায়ী সংস্কার না।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, ‘বাণিজ্যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসবে কি আসবে না, এলে কোন পদ্ধতিতে আসবে, সেটি অনুমান করা কঠিন। আমরা দেখেছি শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশকিছু প্রশ্ন তুলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বলতে চাই, আমাদের যেসব জায়গায় উন্নতি করার প্রয়োজন আছে সেগুলো যেন আমরা করি। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো আমরা করতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, ‘শ্রমিকদের ভালো মজুরি এবং শোভন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রফতানির জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষম বাজারও তৈরি করতে হবে। অন্য সেক্টরেও কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। শ্রমিকরা একদিনে সবকিছু চাচ্ছেন না। তাদের পাশ কাটিয়ে কিংবা সঠিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সমস্যা বাড়ে। ফলে তাদের কথা শুনে সমস্যা সমাধানে একটি রূপকল্প (রোডম্যাপ) প্রণয়ন করা জরুরি। শ্রমিকদের সঙ্গে একটা এঙ্গেজমেন্টের মধ্যে থাকা জরুরি। স্যাংশনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে না করবে তারা জানে। নিষেধাজ্ঞা দিতেও পারে। তাহলে সেটা ভালো হবে না।’
অর্থনীতির সংস্কারের বিষয়ে অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নতুন আয়কর আইন পাস করার পাশাপাশি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেছে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পরামর্শ দিয়েছে, তাই আইন পাস বা সংশোধন করা হয়েছে; এভাবে না দেখে ব্যাংক খাতে সুশাসন ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। আইনগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা লাগবে।’
ডলারের দাম খোলাবাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ডলারের দামের ক্ষেত্রে “শক থেরাপি” দিতে হবে। হয়তো নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ডলারের দামে বড় ধরনের সমন্বয় করলে পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়বে। তখন আমদানি শুল্ক কমানোর মতো আর্থিক উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও ডলারের দাম বাড়লে পণ্য রফতানিতে প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়বে। রফতানিকারকদের প্রণোদনা দিতে হবে না। অন্যদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসার হারও বাড়বে।’ এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার বিষয়ে মত দেন এ অর্থনীতিবিদ।
Posted ১:২১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta