আজ, শনিবার


২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক নন তবুও প্রশিক্ষণে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী

রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪
শিক্ষক নন তবুও প্রশিক্ষণে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী
সংবাদটি শেয়ার করুন....
 
বিপুল ইসলাম আকাশ,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ 
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিক্ষক না হয়েও স্ত্রীকে শিক্ষক বানিয়ে ‘নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তরণ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে। তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি কেরানি বা লাইব্রেরিয়ানও এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন।
জানা যায়, ২০২৪ সাল থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’ এর আওতায় ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি শিক্ষকগণের ‘নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তরণ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ৭ দিনের ওই শিক্ষক প্রশিক্ষণ। ২ দিন প্রশিক্ষণের পর মাঝখানে ৪ দিন বিরতি দিয়ে তা চলে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর সেই প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন কোন কোন শিক্ষক তার একটি তালিকা টাঙানো হয় গত ১৬ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দেয়ালে। শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের তালিকায় ৫৮ নম্বর ক্রমিকে মো. সাজু মিয়া এবং ৫৯ নম্বর ক্রমিকে রেখা বেগম নামের মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষকের নাম। আর প্রশিক্ষণের স্থান ছিল সুন্দরগঞ্জ মহিলা কলেজের ১০২ নম্বর কক্ষ। কিন্তু সব শিক্ষকের নামের পাশে ফোন নম্বর উল্লেখ থাকলেও নেই কেবল ওই দুই শিক্ষকের নম্বর। স্কুলের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, ওই শিক্ষককে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাজু মিয়াকে ওই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে সবাই চিনলেও রেখা বেগম নামের ওই শিক্ষককে কেউই চিনেন না। রেখা নামের ওই শিক্ষিকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী। ক্লাসে পাঠদান করা তো দূরের কথা, একদিনও স্কুলে আসেননি এ সহকারী শিক্ষক। গত কয়েক মাসের হাজিরা খাতা ঘেঁটে দেখা যায়, তাতে নেই কোনো স্বাক্ষর। উপস্থিত ছিলেন না প্রশিক্ষণের পর নতুন বছরের গেল দুই সপ্তাহেও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের যাত্রা থেকে গত ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত রেখা বেগম নামের কোনো শিক্ষককে দেখেননি কেউ। এমনকি নামও শোনেননি তার। প্রশিক্ষণের তালিকায় হঠাৎ ওই শিক্ষকের নাম দেখে হতবাক হয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, ভেতরে ভেতরে আত্তীকরণ করছেন প্রধান শিক্ষক। এর আগেও সবার অজান্তে এভাবেই নিয়োগ দিয়েছেন নিজের শ্যালক ও ভাতিজাকে। অস্বচ্ছতা গ্রাস করে ফেলেছে প্রধান শিক্ষককে। এতে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে স্কুলটির।
শিক্ষার্থীরা জানান, মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনজন ম্যাডাম রয়েছে। নতুন কোনো ম্যাডাম নেই। বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি আছে, কিন্তু কোনো লাইব্রেরিয়ান নেই। তারা রেখা বেগম নামের কোন শিক্ষককে চিনেননা।
এ বিষয়ে জানতে রেখা বেগম নামের ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করেও কোনো ফোন নম্বর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গেলে জানা যায়, তিনি পরিবারসহ বিভাগীয় শহর রংপুরে থাকেন।
এ ব্যাপারে মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীন বলেন, রেখা বেগম আমার স্ত্রী। তাকে ২০১৬ সালে লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়েছি। তাকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সবাই জানে। এ জন্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। লাইব্রেরিয়ান ও কেরানিরাও এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন। এতে কোন সমস্যা নাই।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, এ বিষয়ে মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, রেখা বেগম লাইব্রেরিয়ান পদে আছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে বেতন না পাওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান না করে কেউ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন না। তিনি যদি শিক্ষক না হয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:০১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com