আজ, রবিবার


২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শিরোনাম

হবিগঞ্জে প্রথম সরাসরি ভোটে নারী সাংসদ হলেন কেয়া চৌধুরী

শনিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
হবিগঞ্জে প্রথম সরাসরি ভোটে নারী সাংসদ হলেন কেয়া চৌধুরী
সংবাদটি শেয়ার করুন....

এস এম টিপু সুলতান, হবিগঞ্জ :

হবিগঞ্জ জেলায় প্রথম নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসনে সরাসরি ভোটে এই প্রথম জেলায় কোন নারী সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করেছেন ভোটাররা। এর আগে হবিগঞ্জ জেলা থেকে ভোটে নির্বাচিত কোন নারী সাংসদ ছিলেন না। এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪৪ হাজার ৪৮৯ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া বাহুবল উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে বাসিন্দা। তাঁর পিতা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী। তিনি ছিলেন প্রবীন রাজনীতিবিদ। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মানিক চৌধুরী ২০১৫ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
জানা যায়, হবিগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি পরিচিত। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১০ সালে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের স্বার্থে আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সংসদ সদস্য হন যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাপা মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরী বাবু। একই সময়ে (হবিগঞ্জ-সিলেট) সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পান এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। গেল ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান কেয়া চৌধুরী। তবে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়াকে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ মিলাদ।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জাপা মনোনীত সাবেক এমপি মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীর ভাই গাজী মোহাম্মদ সাহেদ, সাবেক সংরক্ষিত এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ ফারকানী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মোঃ নুরুল হক, জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোছাঃ ইয়াছমিন আক্তার মুন্নি ও ইসলামিক ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ উক্ত আসনটি তাদের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ায় ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এছাড়া জাকের পার্টির প্রার্থী মোছাঃ ইয়াছমিন আক্তার মুন্নি ও ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী মোঃ মনিরুল ইসলাম তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। ফলে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরীর মধ্যে দেখা দেয় ভোট যুদ্ধ। ওই নির্বাচনে মুনিম চৌধুরীকে হারিয়ে সরাসরি ভোটে প্রথম বারের মত নির্বাচিত হন কেয়া চৌধুরী।

সাধারণ ভোটাররা জানান, এবার নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কেয়া চৌধুরীর পাশে ছিলেন না। দলীয় নেতৃবৃন্দরা জাপা প্রার্থী আব্দুল মুনিম চৌধুরীর পক্ষে মাঠে কাজ করেন। তবে কেয়া চৌধুরী নিজ দলের সমর্থন না পেলেও মনোবল হারাননি। দলীয় কিছু তরুণ ও প্রবীন নেতাদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ান তিনি। দুই উপজেলার প্রবীন অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার পাশে ছিলেন।

বাহুবলের শৈয়া গ্রামের ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমরা একজন নারী এমপি পেয়েছি। তিনি দুই উপজেলার নারীদের খুবই প্রিয় মানুষ। এবার নির্বাচনে তিনি জয়ী হওয়ায় সমাজের দরিদ্র ও অসহায় নারীরা অনেক উপকৃত হবেন বলে আশা করছি’। তিনি অনেক যোগ্য ব্যক্তি। আশা করছি পূর্বের ন্যায় তিনি এখন আরও বেশি উন্নয়ন করবেন’।

নবীগঞ্জের সুলেমান মিয়া বলেন, ‘তিনি সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকার সময় অনেক উন্নয়ন করেছেন। এবার নির্বাচনে মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেছে। দীর্ঘদিন পর আমরা যোগ্য এমপি পেয়েছি’।
একই উপজেলার শফিক মিয়া বলেন, ‘এই আসনে আগের এমপি তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। তাই সবাই কেয়া চৌধুরীকে ভোট দিয়েছে। আমার কাছে তিনি যোগ্য প্রার্থী ছিলেন তাই এবার ভোট তাঁকে দিয়েছি। শৈয়া গ্রামের নারী ভোটার ছায়া বেগম বলেন, ‘কেয়া আপা আমাদের মনের মত মানুষ। তিনি আমাদের খোঁজ-খবর রাখেন। বিপদে-আপদে তাঁর পাশে যেতে পারবো। তাই এবার তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি’।

এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া বলেন, ‘আমি যখন সংরক্ষিত আসনের সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তখন থেকেই বাহুবল-নবীগঞ্জের সাধারণ মানুষ আমার সাথে ভীড়তে থাকেন। তাদের দাবী ছিল আমি যেন এই আসন থেকে নির্বাচন করি। যে কারনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন না দিলে আমি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে সাধারণ ভোটাররা আমাকে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করতে বাধ্য করেন এবং সমর্থন দেন। নির্বাচনে তারা বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সাধারণ মানুষের উন্নয়নে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে আমি তাদের ঋণ পরিশোধ করতে চাই’।
জেলা রিটার্ণিং কর্মকর্তার ঘোষনা অনুযায়ী এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া ঈগল প্রতীক পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৫২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জাপা) আবদুল মুনিম চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭০৩ ভোট।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com