আজ, সোমবার


১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শিরোনাম

মুলাদীতে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন ১১৫৪ বস্তায় আদা চাষ

বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মুলাদীতে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন ১১৫৪ বস্তায় আদা চাষ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল): 
বরিশালের মুলাদী উপজেলায় এ বছরই প্রথম উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে বস্তায় আদা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বছর শুরুতেই ১১৫৪ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। উপজেলার বাটামারা ৭৫ বস্তা, সফিপুর ২২৩ বস্তা, নাজিরপুর ১৬৫ বস্তা,
চরকালেখা ৬৫ বস্তা, গাছুয়া ৪০০ বস্তা, মুলাদী ৩০ বস্তা, কাজিরচর ৮০ বস্তা ও পৌরসভা ১২০ বস্তা মোট ১১৫৪ বস্তা আদা চাষে করেছে কৃষকরা ফলনও ধরেছে ভালো। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতিঃ বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয় আবার অনেকেই এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করার কথা জানেন না, আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। আবার একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যাবে। খরচ নেই বললেই চলে! এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠোন, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্যে আলাদা কোনও জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জায়গাতে এই পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন। সাধারণত বাঁশবাগানের তলায় কোনও ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। সেই বাঁশবাগানে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন। চাষ পদ্ধতিঃ প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সেজন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে হাড়ের গুঁড়ো, গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্যে বসাতে হবে ৭৫ গ্রামের একটি করে কন্দ। সামান্য জল দিতে হবে। এরপর বস্তার উপর ঢেকে দিতে পারলে ভালো হয়, তাতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকবে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসবে। বিস্তারিত পদ্ধতিঃ একটি বস্তায় তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালি, এক ঝুড়ি পচা গোবর সার ও ২৫ গ্রাম ফিউরাডন লাগবে। বালি পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে, ফিউরাডন উইপোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা করবে। মাটির সঙ্গে গোবর, বালি ও ফিউরাডন ভালোভাবে মিশিয়ে সিমেন্টের বস্তায় ভরে ঝাঁকিয়ে নিন তাতে মিশ্রণটি ভালোভাবে চেপে যাবে। আলাদা একটি বালি ভর্তি টবে তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিন ২০-২৫ দিন পর ওই আদা থেকে গাছ বের হবে। তখন আদার চারা সাবধানে তুলে বস্তার মুখে তিন জায়গায় বসিয়ে দিন। দিনের অধিকাংশ সময় রোদ পায় এমন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদা গাছ বাড়তে থাকবে। চারা লাগানোর দু’মাস পরে চার চা চামচ সর্ষে খৈল এবং আধ চামচ ইউরিয়া প্রয়োগ করুন মাটিতে। মাঝে খুঁড়ে মাটিটা একটু আলগা করে দিলে ভালো হয়। আদার কন্দ লাগানোর আগে ব্যাভিস্টিন দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো হয়। এতে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচবে। চাইলে অন্য কোনো ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করতে পারেন। শোধনের পর আধা ঘণ্টা ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। আদার রোগ ও পোকামাকড়ঃ রাইজম রট রোগঃ পিথিয়াম এফানিডারমেটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণের কারণে এ রোগ হয়। এ রোগ রাইজমে আক্রমণ করে বলে আদা বড় হতে পারে না ও গাছ দ্রুত মরে যায়। লক্ষণঃ প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু পাতায় কোন দাগ থাকে না। পরবর্তীতে গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মরে যায়। রাইজম (আদা) পঁচে যায় ও ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায়। ভেজা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশী দেখা যায়। বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতা থাকলে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ রোগ বীজ, পানি ও মাটির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। ব্যবস্থাপনাঃ আক্রান্ত গাছ রাইজোমসহ সম্পূর্ণরূপে তুলে ধ্বংস করতে হবে। রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড বা ১ গ্রাম অটোস্টিন মিশ্রিত দ্রবণে বীজকন্দ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে ছায়ার নিচে শুকিয়ে রোপণ করতে হবে। সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। একই জমিতে বার বার আদা চাষ করা যাবে না। কন্দ পঁচা রোগ দ্বারা আক্রান্তের প্রাথমিক পর্যায়ে কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম বা রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে মাটির সংযোগ স্থলে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধ করা যাবে। পাতা ঝলসানো রোগঃ প্রাথমিক অবস্থায় পাতায় ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে এসব দাগগুলোর মধ্যে ধূসর বর্ণ হয় এবং চারপাশে গাঢ় বাদামি আবরণ থাকে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে দাগগুলো বড় হতে থাকে এবং একত্রিত হয়ে যায়। প্রতিকারঃ বীজ লাগানোর সময় রোগ ও পোকা মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে ২-৩ বার ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা যেতে পারে। ডগা বা কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকাঃ কান্ড আক্রমণ করে বলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়। এ পোকার মথ কমলা হলুদ রঙের এবং পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে। কীড়া হালকা বাদামি বর্ণের। গায়ে সুক্ষ্ধসঢ়;ণ শুং থাকে। লক্ষণঃ পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খায় বলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় ডেড হার্ট লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত কান্ডে ছিদ্র ও কীড়ার মল দেখা যায়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়। ব্যবস্থাপনাঃ পোকার আক্রমণ বেশি হলে, সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২০ মিলি হারে প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। অথবা ডারসবান বা ডাইমেক্রণ প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যাবে। অথবা নুভাক্রন ১০০ ইসি ১ মিলি/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। আদা সংগ্রহঃ জুন-জুলাই মাসে আদা লাগালে ডিসেম্বর- জানুয়ারি মাসে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে। এক একটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। আদা তুলে নেওয়ার পর সেখানে সবজি চাষ করা যেতে পারে। সে জন্যে নতুন করে মাটি তৈরি করারও দরকার নেই। চরমালিয়া গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, আমরা আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করেননি। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমাদেরকে বস্তায় আদা চাষের আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। কৃষক আবদুল মজিদ হাওলাদার বলেন, আমরা আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করেননি। এ বছর শুরু করেছি। তাতে ফলন ভালো এসেছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ দেখাশুনা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার ব্যাক্তিগত একটি ইচ্ছে হচ্ছে মুলাদী উপজেলায় নতুন ফসল অথবা নতুন জাত সম্প্রসারণ করার, এর ধারাবাহিকতায় আমরা কৃষকদের উদ্ভুদ্দকরনের মাধ্যমে, বীজ সহায়তা বা প্রদর্শনী দিয়ে বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে ফলনের বৃদ্ধি চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, এখন সময় কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় মুলাদীতে আরো বস্তায় আদা চাষ হবে। চাষির শ্রম বিফলে যাবে না। মুখে কৃষকের ফুটবে হাসি। নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com