আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তর উপস্থিতিতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যর মধ্য দিয়ে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মনসা মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত ৫শ ৩০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গৈলা মনসা দেবীর মন্দিরে বার্ষিক পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকল শনিবার সকাল ৮টা থেকে পুজার্চণা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাজার হাজার শিশু-নারী-পুরুষ ভক্তরা তাদের মনস্কামনা পুরণ ও পুণ্য লাভের আশায় মানত পুজা দিতে দুধ, কলা, ফল, মিষ্টি, ধুপ, ধুনো, ছাগ বলিদান, যাগযজ্ঞ সম্পন্ন করেন।
এ সময় আগত ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ। জগদ্ববিখ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত’র স্মৃতি রক্ষা মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারক চন্দ্র দে জানান, দেবী মনসা পুজা উপলক্ষে পুজার আগের দিন থেকেই দেশী-বিদেশী ভক্তরা সমবেত হতে শুরু করেন মন্দির আঙ্গিনায়। পুজার আগে মন্দির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনের রয়ানী গান। রয়ানী গান হলো ছন্দ আর সুরের মুচ্ছনায় দেবী মনসার পৃথিবীতে চাঁদ সওদাগরের হাতে পুজা পাবার কাহিনী বর্ণনা। সুষ্ঠ ও নির্বিঘ্নে পুজা সম্পন্ন করতে মন্দির কমিটি ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শত-শত দোকানীর পশরা সাজানো বেঁচা কেনায় মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশাপাশের এলাকা রুপ নিয়েছে মেলায়।
আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পুজার উপকরণসহ ঘর গৃহস্থলির কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটাও করেছেন। মনসা পুজায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহম্মেদ পান্না, সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন শিকদার, সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন লাল্টু, বিএনপি নেতা আবুল মোল্লা, এনায়েত হোসেন খান মনু, মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক দুলাল দাশ গুপ্ত, সুশান্ত কর্মকার, কাজল দাশ গুপ্ত, উপজেলা প্রশাসন ও বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নীলকান্ত বেপারী বলেন, ৫শ ৩০ বছর আগে মধ্য যুগে সুলতান হোসেন শাহ রাজত্বকালে ১৪৯৪ সনে কবি বিজয় গুপ্ত সাপের দেবী মনসা বা বিষ হরি (বিষ হরণকারী) দেবী কর্তৃক স্বপ্ন দেখে নিজ বাড়ির সু-বিশাল দীঘি থেকে পুজার ঘট তুলে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে দেবী মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরে দেবী মনসার স্বপ্ন আদেশে পাশ^বর্তী বকুল গাছের নীচে বসে “পদ্মপুরাণ” বা “মনসা মঙ্গল” কাব্য রচনা করেন। সেই থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশসহ সর্বত্রই পঞ্জিকা মতে শ্রাবন মাসের শেষ দিনে দেবী মনসার পুজার প্রচলনের সাথে সাথে গৈলা মনসা মন্দিরে দেবী মনসার নিত্য পুজা অর্চণাসহ বার্ষিক পুজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মনসা মঙ্গল কাব্য বাংলা সাহিত্যে অমর কাব্য হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে।
Posted ২:৩৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০২৪
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta