নিজস্ব প্রতিনিধি: তিন দফায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে বরিশাল অঞ্চলের কৃষরা এবার প্রায় ২৩ লাখ টন আমন ধান ঘরে তুলেছেন। তবে গত বছরের তুলনায় ভাল দাম না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের। অথচ বাজারে চালের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অন্তত ২০ ভাগ বেশি। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে সদ্য সমাপ্ত ‘খরিপ-২’ মৌসুমে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৩ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কৃষিযোদ্ধারা ৮ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৫ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন করেন।
যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত। কিন্তু এ বাড়তি জমিতে আমনের আবাদ হলেও বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা একের পর এক ঘূর্ণিঝড় বারবারই বিপর্যয় ডেকে আনে। তবে সব বাঁধা অতিক্রম করে সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে ২২ লাখ ৮ হাজার ৫৫০ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৩ হাজার টন অতিরিক্ত ২২ লাখ ৮১ হাজার ২১২ টন আমন চাল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা।
গত বছর বরিশালে প্রতিমণ আমন ধান ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গেলো বছর এসময়ে যে চালের কেজি ছিল ৪৫ টাকা, তা এখন ৫০ টাকার ওপরে। ভাল-মধ্যম মানের মিনিকেট চালের কেজি এখন ৬৫-৬৮ টাকা কেজি। বোরো মৌসুমেও ধানের দাম না বাড়লেও কৃষকের জমির ধান ফড়িয়াদের হাতে যাবার পরেই চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আমন মৌসুমেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। অথচ প্রতিবছরই ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছেনা কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা ধানের দাম।
অপরদিকে এখনো বরিশাল অঞ্চলে আমনে হাইব্রীড জাতের ধানের অবাদ খুবই সীমিত। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ৮ লাখ ৮১ হাজার হেক্টরের মধ্যে হাইব্রীড জাতের ধান ছিল ২৫ হাজার হেক্টরেরও কম। এমনকি এ অঞ্চলে এখনো ৩ লক্ষাধিক হেক্টরে সনাতন স্থানীয় জাতের আমনের আবাদ হচ্ছে। যার হেক্টরপ্রতি গড় ফলন মাত্র ১.৭৩ টনের মত। এমনকি হাইব্রীড জাতের উৎপাদনও ৪ টনের নিচে । অথচ ‘ব্রি’ উদ্ভাবিত আমাদের জলবায়ু উপযোগী হাইব্রীড জাতের বীজ সহ আবাদ প্রযুক্তি অনুসরণ করলে এ অঞ্চলেও হেক্টর প্রতি উৎপাদন অনায়াসেই সাড়ে ৪ টনেরও বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে এ অঞ্চলে যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদ হয়েছে, তার গড় উৎপাদনও ২.৮৯ টন হলেও ভালমানের বীজ ও উন্নত প্রযুক্তি অনুসরণ করে তা খুব সহজেই সোয়া ৩টনে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করছেন মহলটি।
বরিশাল অঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ ও উৎপাদনে এখনো পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এর মাঝারী বর্ষণে আমনের কোন ক্ষতি না হলেও ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে বরিশাল উপকূলে আছড়ে পড়ায় আমনের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। ওই ঝড়ের প্রভাবে মাত্র ১২ ঘণ্টায় বরিশালে ২শ মিলি বৃষ্টি হয়েছিল। এর ২২ দিনের মাথায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ বরিশাল উপকূল থেকে সাড়ে ১২শ কিলোমিটার দূরে ভারতের অন্ধ্র উপকূলে আঘাত হানলেও এর প্রভাবে টানা ৫ দিনের মেঘলা আবহাওয়ার সাথে অগ্রহায়ণের হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত আমনের আগের ক্ষতিকে আরো তরান্বিত করে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা জানিয়েছেন।
তবে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই এবার বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ২৩ লাখ টন আমন ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চল।
Posted ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta