স্টাফ রিপোর্টার: ইতালির পরিসংখ্যান ব্যুরো আইস্ট্যাট জানায়, ২০২৩ সালে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে কর্মসংস্থান বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ১ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে বেশি। নির্মাণশিল্পে কর্মসংস্থান বেড়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা জীবিকার সন্ধানে দেশটির উত্তরাঞ্চল ও বিদেশে পাড়ি জমাতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। উন্নত অবকাঠামো ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনছে নিজ ভূমিতে। এতে ইতালির উত্তর-দক্ষিণ অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করছে বিশ্লেষকরা। ইউরোজোনের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি। তবে ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্যমতে সিসিলি, নেপলসের আশপাশের কাম্পানিয়া ও উপদ্বীপের দক্ষিণপ্রান্ত ক্যালাব্রিয়া এখনো ইউরোজোনের দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও দ্রুতই পরিবর্তন আসছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে। ২০২৪ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো ইতালির দক্ষিণাঞ্চল বা ‘মেজ্জোজোর্নো’ অংশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি ছিল। ইতালির গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসভিআইএমইজেড-এর তথ্যমতে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জিডিপি বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা একই সময়ে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে। এসভিআইএমইজেড-এর পরিচালক লুকা বিয়ানচি বলেন, ‘এমন ধারাবাহিক অগ্রগতি গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে চলছে একের পর এক নির্মাণ প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে নেপলসের দক্ষিণের সালার্নো থেকে রেজিও ক্যালাব্রিয়া পর্যন্ত উচ্চগতির রেললাইন এবং পুগলিয়া থেকে ক্যালাব্রিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক। সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্প সিসিলি ও মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করতে মেসিনা প্রণালীর ওপর ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে নির্মিতব্য বিশ্বের দীর্ঘতম একক স্প্যানের সেতু। ইতালির উইবিল্ড, স্পেনের সাসির ও জাপানের আইএইচআই—এই তিন প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এতে ৭ বছরের নির্মাণকালে এক লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, পরিবেশের ক্ষতি ও সরকারি সেবায় বিনিয়োগ ঘাটতি এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি। সিসিলির ২৪ বছর বয়সী রাফায়েল গিরল্যান্ডো মিলানের পলিটেকনিকো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। তিনি ফিরে এসে এই সেতুর কাজে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, ‘মেসিনা সেতু ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন। এটি একটি বিশ্বমানের প্রকৌশল চ্যালেঞ্জ। একজন সিসিলিয়ান হিসেবে এটি আমাদের অঞ্চলের গর্ব ও নতুন আগ্রহের উৎস হবে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হবার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে ইতালির অভ্যন্তরীণ অভিবাসন প্রবণতাতেও। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো আইস্ট্যাট জানায়, ২০২৩ সালে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে কর্মসংস্থান বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ১ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে বেশি। নির্মাণশিল্পে কর্মসংস্থান বেড়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে কাজ করা দক্ষিণ ইতালীয়দের সংখ্যা কমেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অনুকূল আবহাওয়া ও সুলভ জীবনযাত্রা বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনছে নিজ ভূমিতে। সিসিলির বাসিন্দা আন্দ্রেয়া ফালজোন বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে বাড়ি ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় নিজের শহরে ফিরে এসেছি। এখানে পরিবার নিয়ে থাকা এখন অনেক সহজ। তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে জনসংখ্যা স্থানান্তরের দীর্ঘস্থায়ী প্রবণতা থামানো সহজ নয়। সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা আইস্ট্যাট-এর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ সালে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার বাসিন্দা উত্তরাঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছেন, যা বিপরীতমুখী স্থানান্তরের প্রায় দ্বিগুণ। এসভিআইএমইজেড-এর পরিচালক বিয়ানচি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ‘সামাজিক অবকাঠামোতে’ বিনিয়োগ। তার মতে, ‘অভিবাসন শুধু অর্থনৈতিক তথ্য নয়, মানুষ তাদের ভবিষ্যতকে যে দৃষ্টিতে দেখছে তার ওপর নির্ভর করে।
Posted ১১:০৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta