আজ, Friday


১লা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শিরোনাম

দেশের এক-তৃতীয়াংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার: ইউনিসেফ

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
দেশের এক-তৃতীয়াংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার: ইউনিসেফ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

গণবার্তা রিপোর্টার : ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহাযোগিতায় এই সূচক প্রকাশ করেছে জিইডি। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে শিশুরা যেসব বঞ্চনার শিকার হয় এবং যা প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার ও সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে চলেছে, সেসব অবিলম্বে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

দেশের প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে প্রায় তিনজন (২৮ দশমিক ৯ শতাংশ) বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ জানায়, এ হার দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী প্রাপ্তবয়স্কদের হারের (২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ) চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শিশুরা বাংলাদেশে বিদ্যমান দারিদ্র্যের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।

ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহাযোগিতায় এই সূচক প্রকাশ করেছে জিইডি। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে শিশুরা যেসব বঞ্চনার শিকার হয় এবং যা প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার ও সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে চলেছে, সেসব অবিলম্বে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, এমপিআই-এ একটি বিস্তৃত ও সমন্বিত পদ্ধতিতে দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়, যেখানে শুধু আয়ের ভিত্তিতে নয়, বরং শারীরিক দুর্বলতা বা খারাপ স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, অপর্যাপ্ত পুষ্টি, অনিরাপদ জীবনযাপন বা থাকার ব্যবস্থা ও অত্যাবশ্যকীয় সেবাসমূহের অভাব – এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। এইসব সূচকের অন্তত দুটি দ্বারা প্রভাবিত হলে তাকে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসরত বলে বিবেচনা করা হয়।এমপিআই অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বাংলাদেশে তিন কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে।

অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ও খর্বকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাসে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশে বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ বেশি। এছাড়াও গ্রামীণ এলাকার শিশুরা শহরাঞ্চলের শিশুদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি মাত্রায় বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। এমপিআই-এ স্কুলে উপস্থিতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, শিশুর শিক্ষা-সংক্রান্ত বঞ্চনাগুলো শিশুদারিদ্র্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, যখন দারিদ্র্যের একাধিক মাত্রাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়, তখন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুদারিদ্র্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর সূচনা হয় শিশুদের যে সব ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হয়, তার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, এমপিআই’র সৌজন্যে এখন আমাদের হাতে একটি কার্যকরী টুল (উপকরণ) আছে, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কোথায় এবং কীভাবে শিশুদারিদ্র্য বাংলাদেশের শিশুদের জীবনে প্রভাব ফেলছে; পাশাপাশি আমাদের এখন একটি প্রাথমিক ভিত্তি রয়েছে, যা ব্যবহার করে ভবিষ্যতে শিশুদের বহুমাত্রিক বঞ্চনা মোকাবিলায় অগ্রগতি মূল্যায়ন করা যাবে।

প্রতিবেদনে অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্য বৈষম্যের চিত্রও উঠে এসেছে। দেশের পাঁচটি জেলা বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার রয়েছে বান্দরবানে (৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ)। আর দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সিলেট বিভাগে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি, যা ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি এবং ভোলায় বিদ্যমান উচ্চমাত্রার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য, পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের একটি আঞ্চলিক দারিদ্র্য-ক্লাস্টার বা দারিদ্র্যের ঘনত্বের ইঙ্গিত দেয়। শিশু দারিদ্র্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো পূর্বাঞ্চলের অঞ্চলগুলোতে বেশি। অপরদিকে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য উত্তরাঞ্চলে বেশি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নীতিনির্ধারকদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো এর অন্তর্নিহিত কারণগুলো উদঘাটন করা। আমাদের প্রতিটি সূচকের গভীরে যেতে হবে, বুঝতে হবে কীভাবে এবং কেন তা সামগ্রিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে প্রভাব রাখছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিভিন্ন খাতে সমন্বয়ের ঘাটতি ও দুর্বলতা এবং সাম্প্রতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো, বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য মোকাবিলার জন্য যে জরুরি বিনিয়োগ প্রয়োজন তা সীমিত করছে। আর এর ফলে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফার্স্ট কাউন্সেলর অ্যান্ড অ্যাক্টিং হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এডউইন কুককুক বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য এটি অত্যাবশ্যক যে দেশের সব মানুষ— বিশেষ করে যারা এখনও দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে আছে, তারা সমান সুযোগ ও মর্যাদা লাভ করবে। এর জন্য অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী উভয় ধরনের আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন। অন্য দেশগুলোর সমন্বিত অ্যাপ্রোচ (পদ্ধতি) থেকে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি দেশের নিজস্ব উদ্ভাবন- যেমন বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগের মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণ প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবেদনটি আমাদের সঠিক ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। আসুন আমরা সবাই— সরকার, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী এবং জনগণ—একত্রে কাজ করি, যাতে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে আরো সমতাভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় একটি দেশ যেখানে পিছিয়ে থাকবে না কেউ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com