মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি:
বরিশালের মুলাদীতে সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দুইশতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মতবিরোধে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের ৫জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও ১জন সহকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীশূণ্য একটি ভবনে সময় কাটান। অপরদিকে ৩ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ের ২ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদানে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। এতে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে গাছুয়া ইউনিয়নের সৈয়দেরগাঁও এলাকায় সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় এবং ১৯৭৪ সালে এমপিওভূক্ত হয়। শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও পরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। ওই বিদ্যালয়ের ১-২ কিলোমিটারের মধ্যে সৈয়দেরগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইসলামাবাদ নেছারিয়া আলিম মাদ্রাসা থাকায় নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রায় অচল হয়ে পড়ে এবং শিক্ষকদের বেতনভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থী শূণ্যতার পাশাপাশি ২০১০ সালে জয়ন্তী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হলে সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি দ্বীপ এলাকা কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ওই গ্রামের কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং নদীবেষ্টিত এলাকার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। পরে শিক্ষকদের বেতনভাতাও চালু হয়।
স্থানীয় শিক্ষার্থী অভিভাকেরা জানান, প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম বিদ্যালয়টি কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে সরিয়ে পুনঃরায় সৈয়দেরগাঁও এলাকায় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। শিক্ষার্থীশূণ্য হওয়ার আশঙ্কায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তাকে বাঁধা দেন এবং কৃষ্ণপুর এলাকায় বিদ্যালয়টি রাখার চেষ্টা করেন। এতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় মেরামতের টাকা দিয়ে সৈয়দেরগাঁও এলাকায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করেছেন। সেখানে শিক্ষার্থী না থাকলেও একজন সহকারী শিক্ষক নিয়ে বসে সময় কাটান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়টি নামে নিম্নমাধ্যমিক হলেও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী একটি বিদ্যালয় থেকে নবম শ্রেণির নিবন্ধন করে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বিদ্যালয়ের ৫টি শ্রেণিতে বর্তমানে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ৫জন শিক্ষক থাকলেও ৩জনকে শ্রেণি কার্যক্রম করতে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম এবং সহকারী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান সৈয়দেরগাঁও গ্রামে একটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বসে থাকেন। প্রধান শিক্ষক সবাইকে সেখানেই হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে গেলে কৃষ্ণপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা নদী পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়টি পুনঃরায় শিক্ষার্থীশূণ্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. খোকন ব্যাপারী জানান, বিদ্যালয়ের নামে ৫২ শতাংশ জমি দেওয়া হয়েছে। একটি তিনতলা ভবন বরাদ্দ হয়েছিলো। প্রধান শিক্ষক ভবন নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন এবং তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিতও হচ্ছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টি সড়িয়ে নেওয়ার পায়তারা করায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী এনিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম জানান, নদী ভাঙনের ফলে চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ভাবে কৃষ্ণপুর গ্রামের স্থানান্তর করা হয়েছিলো। ২০১৬ সালে নদী ভাঙন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগের স্থানে টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হওয়ার নির্দেশণাও দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তর নিয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও স্থানীয়দের মধ্যে জটিলতা রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
Posted ১:৩০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta