স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বের প্রবালপ্রাচীরগুলোতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ‘গ্লোবাল ব্লিচিং’ দেখা গেছে। ৮০টিরও বেশি দেশের ৮০ শতাংশের বেশি প্রবাল অত্যধিক উষ্ণ পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম ভয়াবহ টিপিং পয়েন্টে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ‘গ্লোবাল টিপিং পয়েন্টস রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, উষ্ণ পানির প্রবালপ্রাচীরগুলো এখন ‘দীর্ঘমেয়াদি অবক্ষয়ের’ মুখে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবিকার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, আমরা আরো বড় ধরনের বিপদজনক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে আমাজন বন ধ্বংস, প্রধান মহাসাগরীয় স্রোতের ভাঙন ও উত্তর-দক্ষিণ গোলার্ধের বরফচাদরের ক্ষয়। প্রবালপ্রাচীর হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রগুলোর একটি—যেখানে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক প্রজাতি বাস করে। কিন্তু এগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।‘গ্লোবাল টিপিং পয়েন্টস রিপোর্ট’ অনুযায়ী, বিশ্বের প্রবালপ্রাচীরগুলোতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ‘গ্লোবাল ব্লিচিং’ দেখা গেছে। ৮০টিরও বেশি দেশের ৮০ শতাংশের বেশি প্রবাল অত্যধিক উষ্ণ পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবালপ্রাচীরের টিপিং পয়েন্ট ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির মধ্যেই ঘটে, যার গড় অনুমান ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বর্তমানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আগের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস—অর্থাৎ এরইমধ্যে উষ্ণায়নের সীমা অতিক্রম করেছে। প্রতিবেদনটি তৈরিতে অর্থায়ন করেছে অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসের তহবিল। এতে ২৩ দেশের ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৬০ বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে।এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম লেন্টন বলেন, ‘প্রবালপ্রাচীরের ব্যাপক ক্ষতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমরা আর এই বিপদের সম্ভাবনাকে ভবিষ্যতের জন্য বলে দেখতে পারি না। ৩৫০০ তবে সব বিজ্ঞানী একমত নন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাল বিশেষজ্ঞ পিটার মামবি বলেন, কিছু প্রবাল প্রজাতি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম। তিনি সতর্ক করেছেন, মানুষ যদি মনে করে প্রবাল আর বাঁচানো সম্ভব নয়, তবে প্রচেষ্টা থেমে যেতে পারে। ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মাইক ব্যারেট বলেন, ‘এখনই প্রবালপ্রাচীর সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে জলবায়ুর প্রভাব কম—সেগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন প্রতিবেদনটি আরো সতর্ক করেছে, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রীনল্যান্ডের বরফচাদরও বিপদের মুখে, আমাজন বন দ্রুত ধ্বংসের পথে। এসব ঘটলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে আর পৃথিবী আরো বড় বিপদে পড়বে।তবে কিছু আশা আছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কার্বন কমানোর উদ্যোগের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব, যা অন্য বিপদজনক টিপিং পয়েন্টের আগেই ক্ষতিকারক পরিবর্তনকে কমাতে সাহায্য করবে। অধ্যাপক লেন্টন বলেন, এখনই আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারি—এটাই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ রক্ষা করার একমাত্র সুযোগ।
Posted ৬:০৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta