গণবার্তা রিপোর্টার : চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চিত্রশিল্পী মাইকেল না’মান, খ্যাতনামা ডকুনির্মাতা রা’নান আলেকজান্দ্রোউইচ, গোল্ডেন লায়ন বিজয়ী চলচ্চিত্র ‘লেবাননের’ পরিচালক স্যামুয়েল মায়োজ, কবি অ্যারোন শাবতাই, কোরিওগ্রাফার ইনবাল পিন্টো প্রমুখ।
তেল আবিবের বিরুদ্ধে গাজায় নৃশংস অভিযান চালানোর অভিযোগ তুলে সেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছেন হাইপ্রোফাইল ৩১জন ইসরায়েলি। চিঠিতে দাবি তুলে বলা হয়েছে, ‘গাজায় নৃশংস অভিযান বন্ধ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলকে অবশ্যই ইসরায়েলকে অচল করে দেয়ার মতো বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখতে হবে।’ খবর দ্য গার্ডিয়ান।
চিঠিতে সাক্ষরকারী হাইপ্রোফাইল ইসরায়েলিদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) বিজয়ী ডকুমেন্টারি নির্মাতা ইউভাল আব্রাহাম, সেখানকার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাইকেল বেন-ইয়াইর, ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার ও জিইউইশ অ্যাজেন্সির সাবেক প্রধান আব্রাহাম বুর্গ ও ইসরায়েলের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক সম্মাননা ইসরায়েল প্রাইজ বিজয়ী বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাহিত্য, বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা ও জ্ঞানচর্চায় অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
চিঠিতে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গাজাবাসীকে ক্ষুধার্ত রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া এবং লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক গাজা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ করেন।চিঠিটিকে কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। প্রথমত, চিঠিটিকে দেখা হচ্ছে খোদ ইসরায়েলের মধ্যে থেকে ইসরায়েলি নির্মমতার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা ও প্রতিবাদের নিদর্শন হিসেবে। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের রাজনীতিবিদরা এখন দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার সমর্থন দিয়ে বক্তব্য রাখা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের কথা বলছেন। এমন পরিস্থিতিতেও এ রাজনৈতিক ট্যাবু ভঙ্গ করেই আন্তর্জাতিক মহলের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের দাবি রেখে বক্তব্য রাখা হয়েছে চিঠিটিতে।চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চিত্রশিল্পী মাইকেল না’মান, খ্যাতনামা ডকুনির্মাতা রা’নান আলেকজান্দ্রোউইচ, গোল্ডেন লায়ন বিজয়ী চলচ্চিত্র ‘লেবাননের’ পরিচালক স্যামুয়েল মায়োজ, কবি অ্যারোন শাবতাই, কোরিওগ্রাফার ইনবাল পিন্টো প্রমুখ।
গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতা এখন ইসরায়েলিদেরও ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন বিশ্বের অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী ইহুদি জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও। বিশেষ করে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগতে থাকা ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি ও খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলি করার ব্যাপক মাত্রায় আলোড়ন তুলেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২১ মাসের ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলভিত্তিক দুটি মানবাধিকার সংগঠন, বৎসলেম এবং ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েল সোমবার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক’ নীতি চালাচ্ছে। এটিকেও ইসরায়েল সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার আরেকটি নিদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ইহুদি ধর্মীয় সম্প্রদায় রিফর্ম মুভমেন্টের পক্ষ থেকে রোববার বলা হয়, গাজায় ছড়িয়ে পড়া দুর্ভিক্ষের জন্য ইসরায়েলি সরকার দায়ী। সংগঠনটির ভাষ্যমতে, ‘হাজার হাজার গাজাবাসীর তীব্র ক্ষুধার বিষয়টিতে কারোরই অবহেলা কাম্য নয়। আবার অনাহারে মৃত্যু আর তীব্র ক্ষুধার মধ্যে পার্থক্য টানা নিয়ে সুক্ষ্ণ বিতর্ক করতে গিয়েও সময় নষ্ট করা এখন উচিত হবে না।
সংগঠনটির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘শিশুদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদের শোক যেন নির্লিপ্ততায় পরিণত না হয়, আর ইসরায়েলের প্রতি ভালোবাসা যেন আমাদেরকে অসহায়দের আর্তনাদ থেকে অন্ধ করে না দেয়। আসুন আমরা এই মুহূর্তের নৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাফাহ শহরের ধ্বংসস্তুপের ওপর যে ‘মানবিক শহর’ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। আর ফিলিস্তিনিদের সেখানে জোরপূর্বক রাখা হবে জাতিগত নির্মূল অভিযানের শামিল।
এসব বক্তব্য বিবৃতি এবং প্রমাণ সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির সরকারি কর্মকর্তা এবং ডানপন্থী এনজিওগুলো গাজায় ইসরায়েলসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করে চলেছে।এমনকি জাতিসংঘের তুলে ধরা তথ্য এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা স্বীকার করে নেয়া সত্ত্বেও বিষয়টি স্বীকার করছে না ইসরায়েল সরকার।
Posted ৩:৪২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta