উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের প্রথমদিকে উদ্ধার করে নেয়া হয় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
গতকাল যখন এক এক করে আহতদের আধুনিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হচ্ছিল সে সময় জরুরি বিভাগে ডিউটি পালন করছিলেন হাসপাতালটির নিরাপত্তারক্ষী রফিক উল্ল্যাহ। তার বয়ানে উঠে এসেছে সে সময়ের ভয়াবহতা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে রফিক উল্ল্যাহর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি এই ঘটনাকে কারবালার মাঠের সঙ্গে তুলনা করেন। রফিক উল্ল্যাহ বলেন, প্রথমে একজন রোগী আসে। আমরা তখনো জানি না বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। এরপর একজন একজন করে আসতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে জরুরি বিভাগ আহত মানুষে পূর্ণ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, যারা আসছিল, তাদের বেশিরভাগেরই শরীরে কাপড় ও চামড়া ছিল না। আগুনে সব পুড়ে গিয়েছিল। অনেকের হাত-পা ভাঙা ছিল। তাদের পোড়া শরীর আর আর্তনাদে মনে হচ্ছিল যেন হাসপাতাল একটি কারবালার মাঠ।
রফিক উল্ল্যাহ সে সময়ের চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, পোড়া রোগীদের স্যালাইন, পানি, অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। হাসপাতালের ফার্মেসির সব স্যালাইন শেষ হয়ে গিয়েছিল। জরুরি বিভাগের মেঝেতে স্যালাইনের কারণে জমেছিল হাঁটু সমান পানি। হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স, স্টাফরা চিকিৎসা দিয়েও পারছিল না। প্রথম এক ঘণ্টায় ৪০ জনের মতো রোগী আনা হয়েছিল। স্যালাইন ও প্রয়োজনে অক্সিজেন দিয়ে তাদের আবার ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে জরুরি বিভাগে জায়গা না হওয়ায় ডাক্তাররা বাইরেই চিকিৎসা দিয়েছেন।
গত বছর জুলাই আন্দোলনের সময়ও এই হাসপাতালে এত রোগী একসঙ্গে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি। গত বছর আন্দোলনের সময়ও একসঙ্গে এত মানুষ আসেনি। এমন দৃশ্য আল্লাহ যেন আর কখনো না দেখায়।
গতকালের এই দৃশ্য দেখার পর রফিক উল্ল্যাহ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জানিয়ে বলেন, গতকাল পোড়া অনেক বাচ্চাকে ধরেছি। ট্রলিতে তুলেছি, নামিয়েছিও। এসব দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। মাথা থেকে এসব যাচ্ছে না। শরীরে রাত থেকে জ্বর এসেছে। এরপরও আজ বসে বসে ডিউটি করছি।
Posted ২:১০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta