গণবার্তা রিপোর্টার : একপর্যায়ে পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিছু বলতে চেয়েও পারেননি। পাশে থাকা স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। জানা যায়, তিনি জীবনের শেষ বয়সে একটি পুত্রসন্তান পেয়েছিলেন। এখন সেই একমাত্র সন্তান দগ্ধ হয়ে আইসিইউতে। বাসায় তার মা পাগলপ্রায় হয়ে আছেন। সময়টা দুপুর পেরিয়ে প্রায় বিকাল। হাসপাতালের মেঝেতে মাদুর পেতে চুপচাপ বসে আছেন কয়েকজন। তাদের কারো চোখে কান্না, কারো চেহারায় আবার ক্লান্তি আর শোক। কেউ নিঃশব্দে কাঁদছেন, কেউবা অশ্রু ফুরিয়ে যাওয়ার পরও নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন দেয়ালের দিকে। কথা নেই, সাড়া নেই, খাওয়া নেই— প্রিয়জনকে হারানোর শোক তাদের পাথর বানিয়ে দিয়েছে। এ দৃশ্য ছিল গতকাল বিকালে মিরপুরে অবস্থিত বার্ন ইনস্টিটিউটের। সেখানে অবস্থান করছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আহত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের স্বজনরা। সোমবার (২১ জুলাই) দুর্ঘটনায় দগ্ধ শিশুদের মধ্যে এখনো ১২ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক। সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষের ভিড় হাসপাতালের দুটি অপেক্ষমাণ কক্ষ আর বারান্দা ছাড়িয়ে গিয়েছে। অনেকেই মেঝেতে বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হয়ে আছেন। কেউ চুপচাপ দেয়ালের ওপারে কাতরানো সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউবা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আবার নামাজ আদায় করে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করছেন কেউ কেউ। একপর্যায়ে পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিছু বলতে চেয়েও পারেননি। পাশে থাকা স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। জানা যায়, তিনি জীবনের শেষ বয়সে একটি পুত্রসন্তান পেয়েছিলেন। এখন সেই একমাত্র সন্তান দগ্ধ হয়ে আইসিইউতে। বাসায় তার মা পাগলপ্রায় হয়ে আছেন। একটু দূরে বসে থাকা এক নারী বারবার চোখ মুছছিলেন। তাকেও সন্তান হারানোর শোক তাড়া করছে। আইসিইউতে ভর্তি আছেন মাছুমা খাতুন নামে স্কুলটির একজন স্টাফ। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মাছুমার মেয়ের জামাই রায়হান বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন ৬০ পার্সেন্টের বেশি পুড়ে গেছে। গতকাল শুনেছি, এখন কেমন জানি না। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমরা যা পারি চেষ্টা করছি, স্বজনদের পাশে থাকছি। ওষুধ, খাবার, যাতায়াত খরচ, যা প্রয়োজন হচ্ছে তা জোগাড় করে দিচ্ছি। কেউ যদি চিকিৎসার খরচ বহন করতে না পারে, তখন আমরা সহায়তার ব্যবস্থা করছি। স্বজনদের চোখে এখন শুধু একটাই আকুতি, আদরের সন্তানটা যেন বেঁচে যায়। আইসিইউর গেটের ওপাশ থেকে কোনো সুখবর শোনার আশায় তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন হাসপাতালের করিডোরে, শোক আর উৎকণ্ঠার ভারে নুয়ে থাকা হৃদয় নিয়ে। গত সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের ১২ মিনিট পর ১টা ১৮ মিনিটে সেটি উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্তের পরপরই বিস্ফোরণ ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো ১৬৫ জন। এদিকে হতাহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ এবং আহত, নিহত ও নিখোঁজদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে একটি কমিটি গঠন করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি ও দুই শিক্ষার্থী রয়েছেন।
Posted ৪:৩২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta