আজ, Monday


৪ঠা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের অপমানে হতবাক মোদি সরকার

সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫
ট্রাম্পের অপমানে হতবাক মোদি সরকার
সংবাদটি শেয়ার করুন....

গণবার্তা রিপোর্টার : ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলেও কড়া বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ১ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। বেশি শুল্ক আরোপ করেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প, বরং কড়া ভাষায় দেশটির সমালোচনাও করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন আচরণে রীতিমতো বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে নয়াদিল্লিতে বিশ্বের অর্ধেক দেশের ওপর শুল্ক বসানোর ঘোষণার মধ্যে আগেভাগেই দুঃসংবাদটি পেয়েছিল ভারত। তবে প্রস্তুতির জন্য এই বাড়তি সময় খুব একটা কাজে আসেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ার মধ্যে অন্যতম উচ্চহারে শুল্ক আরোপ ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষা ছিল ভারতবিরোধী ও অপমানজনক। ভারতকে বলা হয়েছে একটি ‘মৃত অর্থনীতি’, তাদের বিদ্যমান বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাকে আখ্যা দেয়া হয়েছে ‘বিরক্তিকর ও কঠিন’। একইসঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় অতিরিক্ত জরিমানা আরোপেরও হুমকি দেয়া হয়েছে।বিপরীতে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প এবং তেল অনুসন্ধান চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।ট্রাম্পের শুল্কে ভারতের সবচেয়ে বড় দুটি রপ্তানি খাত—ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক্স (১৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ফার্মাসিউটিক্যালস (১০ বিলিয়ন ডলার) মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে।

প্রাথমিকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান দাবি করেছিল, স্মার্টফোন ও ওষুধ শুল্কের আওতার বাইরে। তবে শুক্রবার (১ আগস্ট) গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বলেছে, এসব পণ্যও শুল্কের আওতায় পড়ছে। ফলে ভারতের শেয়ারবাজার টানা দুদিন ধরে নিম্নমুখী ছিল। দেশি-বিদেশি ব্যাংকগুলোও বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাব্য স্থবিরতা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।ট্রাম্প আরও ঘোষণা দিয়েছেন, ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোকে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। এরপর তিনি বলেছেন, রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ না করলে মস্কোর বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর ১০০ শতাংশ ‘পরোক্ষ শুল্ক’ আরোপ করা হবে।এতে ভারতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী নেতা শশী থারুর বলেন, ১০০ শতাংশ জরিমানার কথাও শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ধ্বংস করে দেবে।শুল্ক ঘোষণার আগেই ভারতের রিফাইনারিগুলো রুশ তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পণ্য ও জাহাজ ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠান কেপলারের বিশ্লেষক সুমিত রিতোলিয়া। তিনি বলেন, ভারতীয়রা এখন তেল সরবরাহে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে, কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা বাড়ছে।ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তিনগুণ বেশি অর্থ খরচ করে তেল আমদানি করে, যার একটি বড় অংশ রাশিয়া থেকে আসে। ট্রাম্প যদি ভারতকে মার্কিন তেল-গ্যাস কিনতে বাধ্য করেন, তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো তার সরকারের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আচরণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার পূর্বঘোষিত ‘প্রকৃত বন্ধুত্বের’ সম্পর্কেও ফাটল ধরিয়েছে। দু’দেশের মধ্যে চার দফা আলোচনার পর ট্রাম্প মোদির সঙ্গে একটি ফোনালাপের মাধ্যমে চূড়ান্ত সমঝোতা চেয়েছিলেন; কিন্তু ভারত চেয়েছিল এ ধরনের শেষ মুহূর্তের চমক এড়াতে।ট্রাম্পের প্রশাসনের অভিযোগ, ভারত বাণিজ্য আলোচনায় ‘ধীরগতির কৌশল’ নিচ্ছে। অথচ ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্রুত চুক্তি পছন্দ এবং ভারতের ধীর ও আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া—এই দুই ভিন্ন পথের মধ্যে মূল সংঘাত। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে, যা ২০১৩ সালে ওবামা ও মনমোহন সিংয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অংশীদারত্ব অনেক ধরনের পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। আমরা দু’দেশের প্রতিশ্রুত বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে মনোযোগী রয়েছি এবং সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com