স্টাফ রিপোর্টার : গ্রাহকরা চিরকাল অপেক্ষা করতে পারে না। কেউ কেউ এরইমধ্যে বিকল্প খুঁজছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যে রফতানি কমতে শুরু করবে এবং ২০২৭ সালে ইসরায়েল সম্পূর্ণ আঘাতটা অনুভব করবে।সাম্প্রতিক গাজা গণহত্যার জেরে ইসরায়েলের অস্ত্র শিল্পে প্রথমবারের মতো গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ১৪০টিরও বেশি দেশে অস্ত্র, নজরদারি প্রযুক্তি এবং ড্রোন বিক্রি করে আসা এ শিল্প এখন তার আন্তর্জাতিক বৈধতা ও বাজার ধরে রাখা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইসরায়েল গাজায় তার সামরিক অভিযানকে কিলার ড্রোন, ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র এবং এআই-সক্ষম যুদ্ধের ‘চূড়ান্ত প্রদর্শনী’ হিসেবে ব্যবহার করলেও এখন বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা এবং কূটনৈতিক চাপের মুখে পড়ছে।গাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে স্পেন ইসরায়েলের সঙ্গে একাধিক অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা খাতের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় আর্থিক আউটলেট ক্যালকালিস্ট বলেছে, ‘ইসরায়েলের অস্ত্রের প্রয়োজন পশ্চিমা দেশগুলোই বেশি। স্পেন একটি ছোট বাজার, কিন্তু অন্য বড় বাজারগুলো নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অস্ত্র বিষয়ক ইসরায়েলের এক নির্বাহী ক্যালকালিস্টকে বলেছেন, ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য হলেও, অনেক গ্রাহক গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়া এবং বিশ্বব্যাপী মনোযোগ সরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তবে গ্রাহকরা চিরকাল অপেক্ষা করতে পারে না। কেউ কেউ এরইমধ্যে বিকল্প খুঁজছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যে রফতানি কমতে শুরু করবে এবং ২০২৭ সালে ইসরায়েল সম্পূর্ণ আঘাতটা অনুভব করবে। সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের রফতানির পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, খাতটি বিশাল। নিষেধাজ্ঞায় ইসরায়েলের অস্ত্র রফতানিতে প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে দ্য ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন যুক্তি দিয়েছিল যে, ইউরোপের প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহ করে কূটনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করেছে ইসরায়েলের অস্ত্র শিল্প। তবে, পশ্চিমা দেশগুলোয় ইসরায়েলের প্রতি জনসমর্থন দ্রুত এবং নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে, এমনকি আমেরিকান ইহুদিদের মধ্যেও। নতুন এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি সাংবাদিক নির হাসোন হারেৎজ-এ লিখেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েল যে বিপর্যয় ঘটিয়েছে, তা ইসরায়েল রাষ্ট্র যে ভিত্তির ওপর নির্মিত হয়েছিল—আন্তর্জাতিক বৈধতা, আরব বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ইসরায়েলি সমাজের ভেতরের সংহতি—তা ধ্বংস করে দিয়েছে। অস্ত্র শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোও চাপের মুখে থাকার কথা স্বীকার করেছে। প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি ক্যালকালিস্টকে বলেন, ‘আমাদের পরিস্থিতি মোটেও সহজ নয়। বাকি মিত্ররাও বুঝতে পারছে যে, আমাদের টেনে নামানো হচ্ছে। একঘরে হওয়া বন্ধুর সঙ্গে কে বন্ধুত্ব রাখতে চায়? ইসরায়েল স্পার্টার মতো বাঁচতে পারে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের সমাপ্তি ঘটলে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপ ও মনোযোগ কমে যাওয়ার আশায় দ্রুত আরো অস্ত্র চুক্তি করার চেষ্টা চালাবে। কারণ, মানবতা ও সমতার তোয়াক্কা না করা অনেক স্বৈরাচারী ও গণতান্ত্রিক সরকার ইসরায়েলি নজরদারি সফটওয়্যার বা কিলার ড্রোন কিনতে আগ্রহী থাকবে।
Posted ৯:২৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta