স্টাফ রিপোর্টার: কয়লা উৎস-গন্তব্য একই, রুটও অভিন্ন, তবুও ভিন্ন ভিন্ন জাহাজের ভাড়ায় বিশাল ফারাক। কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে টন প্রতি ১২ ডলার, আবার কোনটি ১৯ ডলার পর্যন্ত বিল হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
একই রুট হলে জাহাজ ভাড়ায় এতো বিশাল ফারাক হয় কি করে। এখানে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ডলার নয়-ছয় করা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্ন উঠেছে। আর এই সন্দেহের তীর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পটুয়াখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে।
আমদানি নির্ভর কয়লা দিয়ে দেশে ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এরমধ্যে ২টি বেসরকারি কোম্পানির মালিকানাধীন। কয়লার দাম ও দূরত্ব বিবেচনায় বর্তমানে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার যোগান আসছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আরও ছোট করে বললে মুরাপানতাই ও মুরাবারু বন্দর ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়ার সাউথ সুমাত্রা ও ইস্ট-কালিমানতান এলাকা থেকে কয়লা আসছে।
মাদার ভেসেলগুলো (সমুদ্রগামী বড় জাহাজ) ভারত মহাসাগর রুট ধরে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ৬০ হাজার টন বহন ক্ষমতা জাহাজগুলো বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় গভীর সমুদ্রে নোঙর করছে। সেখান থেকে বার্জে করে কয়লা খালাস করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ খালাস করার পর মাদার ভেসেল এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পায়রা পোর্টে। আর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা অর্ধেক খালাস করার পর মোংলা পোর্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রামপালের ক্ষেত্রে মৌসুম ভেদে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া পয়েন্টে নেওয়া হয় বড় জাহাজ। অন্য সময়ে কুতুবদিয়াতে নোঙর করে কয়লা খালাস করে থাকে। কুতুবদিয়া থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূরত্ব ভিন্ন হওয়ায় বার্জের ভাড়া পার্থক্য হওয়ার কথা। সেখানে ভাড়ার তারতম্য দৃশ্যমান।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওশান ফ্রেইট ও অভ্যন্তরীণ লাইটারেজ ভাড়াসহ বিল কষাণো হচ্ছে ৩৫ ডলার, পায়রায় লাইটারেজ (আংশিক) ১৪ ডলারসহ প্রায় ৩২ ডলার, বরিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফ্রেইট ১২ ডলারের সঙ্গে লাইটারেজ ভাড়া কিলোগ্রাম প্রতি ৮০ পয়সা, বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২ ডলারের সঙ্গে লাইটারেজ কেজি প্রতি ৮৫ পয়সা এবং আদানির কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের কয়লায় ওশান ফ্রেইট ১২ ডলার, রেল পরিবহন ১৭ ডলার, অন্যান্যসহ ৩৫ ডলার বিল কষে যাচ্ছে।
ওশান ফ্রেইট নামে যে চার্জ নেওয়া হচ্ছে তাতে বিশাল ফারাক গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই -এলাহী চৌধুরী।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, যদি ইন্দোনেশিয়া অংশে কোল ফিল্ডের দূরত্ব কমবেশি হয়। সেখানে কোনো পার্থক্য আছে কি-না, সেটা দেখা দরকার। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাজ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হচ্ছে রপ্তানিকারকের সঙ্গে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো ওশান ফ্রেইট নামে যে চার্জ দিচ্ছে শুধু সমুদ্রপথের ভাড়া।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি কোম্পানির মালিকানাধীন বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে টন প্রতি ১২ ডলার দরে ফ্রেইট চার্জ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ১৮ থেকে ১৯ ডলার, বাংলাদেশ-চীনের যৌথ মালিকানাধীন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ১৬ থেকে ১৮ ডলার, আর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে আসতে চার্জ দেওয়া হয়েছে ১৪ ডলার দরে। অর্থাৎ বাঁশখালী ও বরিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে রামপালে টন প্রতি প্রায় ৭ ডলার, পায়রার টন প্রতি ৪ থেকে ৬ ডলার বেশি বিল দেওয়া হচ্ছে। টন প্রতি ৬ ডলার বেশি হলে একটি ৬০ হাজার টন কয়লা বোঝাই জাহাজের জন্য বাড়তি গুণতে হচ্ছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়াচ্ছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার (১২৪ টাকা)।
Posted ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta