আজ, Monday


১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শিরোনাম

ধুঁকছে পুঁজিবাজার: সমাধান কোন পথে?

রবিবার, ১১ মে ২০২৫
ধুঁকছে পুঁজিবাজার: সমাধান কোন পথে?
সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্টাফ রিপোর্টার:

ক্রমাগত লোকসানে ধুঁকছে পুঁজিবাজার। গত ৯ মাসে ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী সব শেয়ার বিক্রি করে কেনাবেচার অ্যাকাউন্ট (বিও) বন্ধ করে দিয়েছেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন অন্ততঃ ৫৭ হাজার বিনিয়োগকারী। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট প্রকট হয়েছে। ফলে অর্থনীতির সামগ্রিক সংকটের সঙ্গে পুঁজিবাজারের এই সংকট উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত ৯ মাসে ১৭৯ কর্মদিবসের মধ্যে ১০৫ দিনই দর পতন হয়েছে। এই সময়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩৩৬টির। তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৭টিই দর হারিয়েছে। দর হারানো শেয়ারগুলো গড় পতন ২৬ শতাংশ। ১১ আগস্টের পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ দর হারিয়েছে ২৬১ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। ঘন ঘন দর পতনে হচ্ছে। লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় আজ রোববার এ বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারে প্রণোদনার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

অংশীজনের বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রথমত নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। মতের অমিল থাকতে পারে, তাই বলে আলোচনা না হওয়া কঙ্ক্ষিত নয়। তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজার একটা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা থেকে বের হতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে চেষ্টা করেছে, বিএসইসির ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না।

কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, কমিশনের কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল– অতীতে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না, এমন ভরসা তৈরি করা। অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের ঘটনায় জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা।

১৯ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৫ বছরে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনা থেকে মাত্র ১২টি বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারী দুই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্ণধারসহ পাঁচজনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাকসুদ কমিশন। তদন্ত কমিটি গঠনের পরদিন রাশেদ মাকসুদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবেন। অতীতের বাকি অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে সেগুলো তদন্ত করতে প্রয়োজনে আরও তদন্ত কমিটি করবেন। এমন ঘোষণার সাড়ে আট মাস পরও কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাস্কফোর্সের এক সদস্য জানান, কমিটির পাঁচ সদস্যের সবাই বড় পদে পূর্ণকালীন চাকরি করেন। তাদের পক্ষে এই বিশাল কাজ করার সময় নেই। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় দক্ষতাও অনেক ক্ষেত্রে নেই।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) পদের মতো তিন শীর্ষ নির্বাহী পদ শূন্য অবস্থায় চলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। মাকসুদ কমিশন শূন্য পদ পূরণে স্টক এক্সচেঞ্জকে কোনো চাপই দেয়নি। দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেন মাকসুদ কমিশন। এর ফলে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ডিএসইর ব্রোকারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় কমিশনের, যা এখন আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, আগামী বাজেটে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ এবং মূলধনি মুনাফার ওপর অর্জিত আয়ে কর ছাড় দেওয়া হবে। ভালো সরকারি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারমুখী করতে আকর্ষণীয় হারে কর ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে, এমন ঘোষণার পরও শেয়ারবাজারের দরপতন থামেনি। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব বিষয়ে তাদের অস্বস্তি আছে, সেগুলো আপাতত দূরে রাখা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে এ বাজার পরিচালনা করা যাবে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৪৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ মে ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com