আজ, Sunday


১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শিরোনাম

বাজেটে বিদেশি সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা কমল ১৫ শতাংশ

সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
বাজেটে বিদেশি সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা কমল ১৫ শতাংশ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্টাফ রিপোর্টার :

আগামী বাজেটে বিদেশি সহায়তা ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা কমাল অন্তর্বর্তী সরকার। শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে বিদেশি সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে এটি ১৫ শতাংশ কমিয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বিদেশি সাহায্য ব্যবহারে অদক্ষতার কারণে এ পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তায় বরাদ্দ বাড়ালেও মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো তা কমই কাজে লাগাতে পেরেছে। তার মানে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ব্যয় করার সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা কম ধরা হচ্ছে।

বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি বাস্তবায়নে অর্থের অন্যতম উৎস হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া বিদেশি ঋণ বা সহায়তা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে প্রকল্প সাহায্যের নামে বিদেশি উৎস থেকে। বাকি টাকা সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়।

চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়ন ১ লাখ কোটি টাকা। অবশ্য মূল এডিপি কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বিদেশি সহায়তাও ১ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে সংশোধন করা হয় ৮১ হাজার কোটি টাকা।

গত ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ফিসক্যাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একটি খসড়া বাজেট তুলে ধরেন। এই বাজেটে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য মোট ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫ হাজার কোটি টাকা আসবে বিদেশি তহবিল থেকে। সূত্র জানায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় এনইসির বৈঠকে নতুন এডিপি পাস হতে পারে।

পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে বিদেশি সাহায্য কার্যকরভাবে ব্যবহারে সমস্যায় ভুগেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে চলতি অর্থবছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়নের হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে তিন শতাধিক বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে পাইপলাইনে টাকার পাহাড় জমেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পাইপলাইনে বিদেশি সহায়তা আটকে আছে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৫ লাখ ২৪৬ কোটি টাকা; যা দিয়ে অন্তত ১৫টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। ব্যবহারের ক্ষেত্রে অদক্ষতার কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে পাইপলাইনে যে পরিমাণ বিদেশি সহায়তা আটকে আছে, বছরে তার কমপক্ষে ২০ শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব হলে ধরে নেওয়া হয় ব্যবহার সন্তোষজনক। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১৬ শতাংশ। যে কারণে এবারের বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিদেশি সহায়তা ব্যবহারের হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি সহায়তার লক্ষ্য ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। তবে আলোচ্য অর্থবছরের ৯ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বিদেশি তহবিল থেকে মাত্র ৩২ হাজার ৪১১ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা ছিল ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) গত বছরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে সাহায্য ছাড়ে বিলম্ব ঘটে, যার ফলে প্রকল্পের সময় ও খরচ বেড়ে যায়। এর ফলে লেনদেন ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের নকশায় ত্রুটি থাকে। যে কারণে কাজ শুরু হওয়ার আগেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিপিপি অনুমোদনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বেশি সময় নেয়। মাঝে মাঝে প্রকল্পগুলোতে সঠিক ধরনের পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা হয় না। এ ছাড়া প্রকল্প কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলি, ক্রয়সংক্রান্ত জটিলতা এবং জমি অধিগ্রহণের সমস্যাগুলোকেও সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, একটা প্রকল্পের মেয়াদ হয় তিন-পাঁচ বছর মেয়াদি। ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত হলে কিংবা যথাসময়ে কাজ শেষ হলে পাইপলাইনে জমে থাকার পরিমাণ দ্রুত কমে আসবে। চুক্তি হলেই টাকা পাইপলাইনে চলে আসে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত না হলে পাইপলাইনে টাকা জমবে। কাজেই টাকা দ্রুত ছাড় হতে হলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com