গণবার্তা রিপোর্টার : গুগল স্বীকার করেছে, তাদের অ্যালগরিদম ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৮-এর পরিবর্তে মাত্র ৪ দশমিক ৫-৪ দশমিক ৯ হিসেবে নির্ধারণ করেছিল, যার ফলে জরুরি সতর্কতা পাঠানো হয়নি।২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় গুগলের ভূমিকম্প সতর্কতা ব্যবস্থা অ্যানড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্টস (এইএ) কার্যকরভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে স্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তুরস্কের প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে ১ কোটিরও বেশি মানুষ সময়মতো সতর্কবার্তা পাননি। গুগলের সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা পেলে তারা ৩৫ সেকেন্ড আগেই নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারতেন। খবর বিবিসি।তুরস্কে সেবার প্রথমে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় গুগল মাত্র ৪৬৯টি ‘টেক অ্যাকশন’ সতর্কতা পাঠাতে পেরেছিল। এই সতর্কতা ফোনে উচ্চ শব্দে বাজে এবং স্ক্রিনেও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রদর্শিত হয়— ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডেও। তবে গুগল জানিয়েছে, প্রায় ৫ লাখ ব্যবহারকারীকে কম গুরুত্বের ‘বি অ্যাওয়ার’ সতর্কতা পাঠানো হয়েছিল। তাতে কেবল হালকা ভাইব্রেশন হয়। জোরে শব্দ হয় না বা দৃশ্যমান বার্তা দেয় না।
গুগল বিবিসিকে জানিয়েছে— ‘প্রতিটি ভূমিকম্প থেকেই আমরা শিখি এবং আমাদের সিস্টেম উন্নত করি। ভূমিকম্পের দিন এইএ চালু থাকলেও এটি কম্পনের মাত্রা ভুলভাবে গণনা করেছিল।‘ এইএ বর্তমানে ৯৮টি দেশে ভূমিকম্প সতর্কতা পাঠায় বলে জানিয়েছে গুগল।বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে গুগল স্বীকার করেছে, তাদের অ্যালগরিদম ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৮-এর পরিবর্তে মাত্র ৪ দশমিক ৫-৪ দশমিক ৯ হিসেবে নির্ধারণ করেছিল, যার ফলে জরুরি সতর্কতা পাঠানো হয়নি। একই দিনে দ্বিতীয় বড় ভূমিকম্পের সময় গুগল ৮,১৫৮টি ‘টেক অ্যাকশন’ সতর্কতা এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন ‘বি অ্যাওয়ার’ সতর্কতা পাঠিয়েছিল।গুগলের গবেষকরা পরবর্তীতে অ্যালগরিদম আপডেট করে সেই ভূমিকম্প আবার সিমুলেট করেন। তখন সিস্টেমটি ১ কোটি ‘টেক অ্যাকশন’ সতর্কতা এবং ৬ দশমিক ৭ কোটি ‘বি অ্যাওয়ার’ সতর্কতা পাঠায়। কিন্তু এই ঘটনা বাস্তব ভূমিকম্পের সময় না হওয়ায় অনেকেই জীবন বাঁচাতে পারেননি। কলোরাডো স্কুল অব মাইনসের সহকারী অধ্যাপক এলিজাবেথ রেডি বলেন, ‘আমি সত্যিই হতাশ। এত বড় ঘটনা, মানুষ মারা গেছে, অথচ আমাদের দুই বছর অপেক্ষা করতে হলো এই তথ্য জানার জন্য। এটা মেনে নেয়া কঠিন। গুগল জানিয়েছে, এইএ কোনো দেশের জাতীয় সতর্কতা ব্যবস্থার বিকল্প নয়, বরং একটি সহায়ক পদ্ধতি মাত্র। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মারাত্মক হতে পারে, বিশেষত যখন সেই প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি পরীক্ষিত নয়। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট সিসমিক নেটওয়ার্কের পরিচালক হ্যারল্ড টোবিন বলেন, ‘এই ধরনের ব্যবস্থার কার্যকারিতা কতটা, তা খোলাখুলি জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশ হয়তো ভাবছে, গুগল করছে বলেই আমাদের কিছু করার দরকার নেই।
Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta