আজ, Monday


১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শিরোনাম

শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ: যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ: যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্টাফ রিপোর্টার:

আইএমএফের ঋণের দুটি কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন টানাপোড়েনের পর অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই পক্ষ। আইএমএফের শর্ত মেনে টাকার সঙ্গে ডলার এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সীমার মধ্যে দর ওঠানামা করতে দিত। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে সেই সীমা থাকলো না।

আইএমএফের সমঝোতার কারণে বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ কয়েকটি সংস্থার ২২০ কোটি ডলার জুনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। সব মিলিয়ে ৩৫০ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

পরে সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে আইএমএফ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কর্মকর্তা পর্যায়ের সমঝোতা হয়েছে। আইএমএফের পর্ষদ অনুমোদন দিলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার ছাড় হবে। এদিকে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিন গতকাল প্রতি ডলারের দর ১২২ থেকে বেড়ে ১২৩ টাকা হয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর বলেন, সব ব্যাংকের সহায়তায় বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে তিনি আশা করেন। দুবাইয়ের কিছু এক্সচেঞ্জ কোম্পানি হয়তো বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশের এখন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার শক্তি আছে। ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে তারা আত্মবিশ্বাসী। বাজারে হস্তক্ষেপের জন্য ৫০ কোটি ডলারের একটি তহবিল করা হয়েছে।

গভর্নরের ঘোষণার কিছুক্ষণ পর একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সার্কুলারে গত ৩১ ডিসেম্বর বিনিময় হার-সংক্রান্ত জারি করা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে ডলার বেচাকেনার দর নির্ধারণ করবে। বাজারে লেনদেনের ভিত্তিতে প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে একটি রেফারেন্স বেঞ্চমার্ক দর ঘোষণা করা হবে। আর তদারকির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিদিন দুইবার ডলার বেচাকেনার তথ্য দিতে হবে।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার আলোচনা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ গভর্নর থাকার সময় থেকে হয়ে আসছে। এখন এটি করার কারণে ডলার সংকট দেখা দিলে হয়তো দর বাড়বে। তবে ২০২৩ সালে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই আইএমএফের ঋণ নেওয়া হয়েছে। ফলে এখন এটি নিয়ে কিছু করার নেই। আগের সরকার দীর্ঘদিন ডলারের দর ৮৪ টাকায় ধরে রেখেছিল। সেই নীতি ভালো কিছু ছিল না।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের দর নির্ধারণে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি ভালো সিদ্ধান্ত। কেননা হস্তক্ষেপ থাকলে লুকোচুরির সুযোগ তৈরি হয়। ডলার বাজারভিত্তিক করার ক্ষেত্রে গত বছরের ডিসেম্বরে দেওয়া নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেনে প্রতিদিন দুইবার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য নেবে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝতে পারবে বাজারে কী অবস্থা।

হঠাৎ আইএমএফ এর শর্ত মানতে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন সম্মত হলো এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, ‘আইএমএফের কিস্তি নিয়ে পত্রিকায় বড় বড় হেডলাইন হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, আইএমএফের ঋণ না পেলে সংস্কার নীতি থেকে সরকার সরে যাবে। আমরা সংস্কার থেকে সরে যাইনি। এ কারণে আইএমএফ সরে যায়নি। আমরা তাদের সরিয়ে রেখেছিলাম। এখন মনে করি, সমঝোতার সময় এসেছে।

এদিকে, আইএমএফ গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে শর্ত সাপেক্ষে দুই পক্ষের সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, আইএমএফ স্টাফ এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনা শেষ করতে একমত হয়েছে। এ সমঝোতা বিনিময় হার সংস্কারের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং কর-রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত পদক্ষেপ শেষ করা সাপেক্ষে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল। ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনা অনুমোদিত হলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চেয়েছে। বাড়তি ঋণ যোগ হলে মোট দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি ডলার। বিবৃতিতে বিনিময় হার, রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাতসহ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে স্টাফ পর্যায়ের সমঝোতার পর আগামী মাসে সংস্থাটির পর্ষদ সভায় ঋণ অনুমোদন হবে বলে আশা করে গভর্নর বলেন, আইএমএফে ঋণ অনুমোদনের পর অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোই ঋণ ছাড় করবে। সব মিলিয়ে জুনের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন বা ৩৫০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে। এতে করে রিজার্ভ আরও বাড়বে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com