মাজিদ আল সাবিতি। সৌদি আরবের তায়েফ অঞ্চলের বাসিন্দা। তায়েফের ওয়াদি আল কারনের প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করেন তিনি। তার স্বপ্ন, শ্রম ও প্রচেষ্টায় সৌদি আরবের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ইসলামি সভ্যতার নিদর্শনও বটে।
মাজিদ আল সাবিতি কর্তৃক নির্মিত এই স্থাপত্যে সম্মিলন ঘটেছে ইসলামের ইতিহাস ও আধুনিক শৈলীর। আর এর ভিত্তি রাখা হয়েছে ইসলাম ধর্মের তাৎপর্যপূর্ণ সাত সংখ্যার ওপর।
সাবিতি বলেন, কোরআন মাজিদের একাধিক আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয়, সাত সংখ্যাটি পূর্ণতা ও সামগ্রিকতার প্রতীক। যেমন সাত বেহেশত, সাত জমিন এবং সাত সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যাদেরকে আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার আরশের নিচে ছায়া দেবেন। সাত সংখ্যার এমন তাৎপর্যপূর্ণ আরো অনেক দিক আছে।
প্রকল্পটি আল সাবিতির দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিরই ফসল। তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্বাসী ছিলেন এবং শ্রম, সময় ও সামর্থ্য দিয়ে তা বাস্তবে পরিণত করেছেন। ৭০ হাজার বর্গমিটারের সুবিশাল এই ভবনে রয়েছে সাতটি জাদুঘর, সাতটি সম্মুখভাগ ও সাতটি দরজা।
এই ভবনে ব্যবহার করা হয়েছে ৭০ লাখ পাথরের টুকরা, যেগুলো তিনি নিজ হাতে কেটেছেন এবং স্থাপন করেছেন।
সাতটি জাদুঘর দর্শনার্থীদের পৃথক পৃথক সাতটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা দান করে। প্রদর্শিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে ইসলামি স্থাপত্য, স্থানীয় ঐতিহ্য, চিত্রশিল্প, ভাস্কর্য, দুর্লভ নানা সংগ্রহ, জ্যোতির্বিদ্যা ও সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সামরিক ইতিহাস সম্পর্কিত নানা নিদর্শন।
সাতটি জাদুঘরের একটি হলো- কৃষি জাদুঘর। যাতে কোরআন মাজিদে বর্ণিত বীজ ও শস্যগুলো প্রদর্শন করা হয়েছে।
আল সাবিতির তৈরি ভবনে ৬০০ বর্গমিটারের একটি মেঝের নকশা করা হয়েছে রঙিন পাথর দিয়ে। এটা করা হয়েছে সাদুশিল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। সাদুশিল্প হলো বেদুইন নারীদের কাপড় বুননের প্রাচীন শিল্প-শৈলী। ইউনেসকো সাদুশিল্পকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করেছে।
আল সাবিতি জানান, তিনি নিজেই পাথরগুলো কেটেছেন, অবয়ব ঠিক করেছেন এবং তা সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, কায়িকশ্রমই প্রকল্পটির প্রাণসঞ্চার করেছে। এর প্রতিটি কোনায় লেগে আছে আমার ছাপ, শ্রম ও আত্মত্যাগ। মাজিদ আল সাবিতি তার প্রকল্পে সাত ধরনের পাথর ব্যবহার করেছেন। যার সবই সৌদি আরব থেকে সংগ্রহ করা। যার মধ্যে আছে অগ্ন্যুৎপন্ন কঠিন শিলা পাথর, বেলে পাথর ও নরম শিলা পাথর।
পুরো ভবনটি তার শিল্প নৈপুণ্যের সাক্ষ্য দেয়। বিশেষ করে সাত রঙে রঙিন পাথরের শিল্পকর্মগুলো, যা প্রকৃতপক্ষে সৌদি আরবের ভূতাত্ত্বিক বৈচিত্রকে নির্দেশ করে।
ভবনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে আছে আব্বাসীয় রীতিতে নির্মিত একটি মিনার, বাদশাহ হারুনুর রশীদের স্ত্রী জুবাইদার উদ্যোগে নির্মিত পানির খাল বা নালা এবং একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, যাতে চাঁদ অনুসন্ধান করা যায়।
এ ছাড়া এখানে সৌদি আরবের মেগাপ্রকল্পগুলো যেমন নিওম ও দ্য লাইনের রেপলিকা বা মডেল। আরো আছে মক্কা গেট, তায়েফ গেট ও কিং আবদুল আজিজ ইসলামিক গেটের প্রতিরূপ। আর এসব প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় পাহাড়ের পাথর দিয়ে। যেমন জাবালে নুর, জাবালে সাওর ও জাবালে উহুদ। সৌদি আরবের সামরিক যানগুলোর প্রতিরূপও এখানে আছে।
মাজিদ আল সাবিতির উদ্দেশ্য হলো, এই ভবনকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রে রূপান্তর করা এবং নিজ দেশের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরা।
Posted ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta