স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত নথিতে আফগানদের মধ্যে কারা ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন, কে পুনর্বাসনের আবেদন করেছেন, এমনকি কোন সংসদ সদস্য বা সামরিক কর্মকর্তা তাদের পক্ষে সুপারিশ করেছেন – সব তথ্য উঠে আসে। পরের বছর এই তথ্য ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার এক গোপন কর্মসূচির মাধ্যমে হাজার হাজার আফগান নাগরিককে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর করেছে। ২০২২ সালে দেশটির ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ডেটা ফাঁসের ঘটনায় এই আফগানদের পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়ায় তারা চরম বিপদের মুখে পড়েছিলেন। খবর রয়টার্স।প্রকাশিত নথিতে আফগানদের মধ্যে কারা ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন, কে পুনর্বাসনের আবেদন করেছেন, এমনকি কোন সংসদ সদস্য বা সামরিক কর্মকর্তা তাদের পক্ষে সুপারিশ করেছেন – সব তথ্য উঠে আসে। পরের বছর এই তথ্য ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর ওই আফগানদের ওপর প্রতিশোধের শঙ্কা দেখা দেয়। এই ডেটা ফাঁসের জেরে তৎকালীন কনজারভেটিভ সরকার প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে গোপন পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করে। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো খবর প্রকাশ ঠেকাতে আদালতের মাধ্যমে একটি সুপারইনজাংশন জারি করা হয়। মঙ্গলবার আদালত সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বিষয়টি প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জন হিলি সংসদে বলেন, ‘এ ধরনের গুরুতর তথ্য ফাঁসের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি তিন বছর আগে ঘটেছিল। তবে যাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ব্রিটিশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ আফগান এবং তাদের পরিবার এই গোপন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যে আসতে পেরেছেন বা আসার পথে আছেন। তবে মন্ত্রী জানান, এই ডেটা ফাঁসের কারণে নতুন করে আর কোনো আফগানকে সরাসরি আশ্রয় দেয়া হবে না।সরকারের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধের সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি। তবে এ ঘটনায় ব্রিটিশ সরকারকে বড় ধরনের ক্ষতিপূরণ মামলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আগেও আফগান নাগরিকদের পক্ষে মামলা লড়ার অভিজ্ঞতা থাকা আইনজীবী শন হাম্বার জানিয়েছেন, ফাঁস হওয়া তথ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানসিক যন্ত্রণা ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিপূরণের দাবি করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাদের। ডেটা ফাঁসের এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২২ সালের শুরুর দিকে। সে সময় আফগান পুনর্বাসন প্রকল্পের আবেদনকারীদের একটি স্প্রেডশিট ভুলবশত সরকারের বাইরের একজনকে ই-মেইল করা হয়। এরপর সেটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ২০০১ সালের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে এবং ২০১৪ পর্যন্ত দেশটিতে সক্রিয় যুদ্ধ পরিচালনা করে। বহু আফগান দোভাষী, দপ্তরকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিলেন। তালেবান পুনর্দখলের পর তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা তীব্র হয়। ২০২৩ সালে তৎকালীন কনজারভেটিভ সরকারের আবেদনের পর এই তথ্য ফাঁসের খবর প্রচারে ‘সুপারইনজাংশন’ দেয়া হয়। কারণ প্রকাশ্যে এলে আফগান নাগরিকদের ওপর হত্যাকাণ্ড বা সহিংস হামলার ঝুঁকি বাড়তে পারত। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের লেবার সরকার এই গোপনীয়তার যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখতে পর্যালোচনা শুরু করে। মঙ্গলবার সেই পর্যালোচনার সারসংক্ষেপও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে জানা গেছে, মে মাস পর্যন্ত মোট ১৬,০০০ আফগান যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে এই ডেটা ফাঁসের আগের অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় এসেছিলেন।
Posted ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta