গণবার্তা রিপোর্ট: ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়ে। তবে এবারের রমজানের ঈদের আগে তা কমে গেল। গত মার্চে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অর্থ গত ফেব্রুয়ারি মাস এবং গত বছরের মার্চে দেশে আসা প্রবাসী আয়ের তুলনায় কম। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে ডলারের দর অনেক কমে যাওয়া এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স কমায় এমন হয়েছে। ব্যাংকাররা জানান, কয়েক দিন আগেও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা পাচ্ছিলেন প্রবাসীরা। তবে হঠাৎ কমে গত সপ্তাহে তা ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৩ টাকায় নেমেছিল। অথচ হুন্ডিতে এখনও দর মিলছে ১২০ থেকে ১২১ টাকা। এক দিনে যে দর মিলছিল, হঠাৎ অনেক কমে যাওয়া এবং হুন্ডিতে বেশি পাওয়ায় এমন হয়েছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি হঠাৎ ন্যাশনাল ব্যাংকে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছিল। সাধারণত সমস্যাগ্রস্ত এ ব্যাংকটির মাধ্যমে মাসে ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। তবে ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৩১৩ মিলিয়ন ডলার। এই রেমিট্যান্সের বেশিরভাগ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রেমিট্যান্সও অনেক বেড়ে যায়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম কিছুটা কমেছিল, তবে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। আমরা আশা করেছিলাম ঈদের আগে ভালো পরিমাণ প্রবাসী আয় আসবে। কেন সেটা এলো না, তা বুঝতে পারছি না। তবে অনেকে ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, আবার এপ্রিলেও অনেকে পাঠাতে পারেন। ঈদের আগে আরও সময় আছে দেশে টাকা পাঠানোর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২১৬ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। আগের মাসের তুলনায় কমেছে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বা ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর আগের বছরের মার্চে এসেছিল ২০২ কোটি ডলার। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় কমেছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে এক হাজার ৭০৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ৬০৪ কোটি ডলার। এ হিসেবে প্রথম ৯ মাসে বেড়েছে ১০৪ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বৈদেশিক মুদ্রার জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময় সময় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে। এ দুটি সংগঠন মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট।
ডলার-সংকটের কারণে গত বছর ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে ব্যাংক খাতে। বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়াসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয় এ সময়। তবে এরপরও গত বছরের বেশিরভাগ সময় বৈধ পথে প্রবাসী আয় কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। ব্যাংকগুলো অবশ্য এখন সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি নিজেরাই সমপরিমাণ প্রণোদনা দিচ্ছে।
Posted ১:২৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta