বিমল কুমার রায়, দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় কৃষি আবাদী জমির উর্বর মাটি বিক্রি থামানো যাচ্ছে না। প্রশাসনের তদারকির অভাবে জমির টপ সয়েল ইটভাটায় সরবরাহের আইনের তোয়াক্কা না করে দিন-রাত সমান তালে চলছে কৃষি জমির টপ সয়েল (জমির উপরিভাগ) কাটার মহোৎসব।
ফলে প্রতিদিন একরের পর একর কৃষি জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ইট ভাটায়। এতে করে যেমন জমি উর্বরতা হারাচ্ছে তেমনি ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। জমির এই মহামূল্যবান টপ সয়েল বিক্রি করায় জমির মালিক সাময়িক লাভবান হলেও জমির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। সেই সাথে আশপাশের জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩-৪ ফিট এমনকি অনেক জায়গায় এর থেকে বেশি গভীর করে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যেখানে মাটির উপরিভাগের ৮-১০ ইঞ্চি অংশকে টপ সয়েল বলা হয়। এই অংশে মাটির মূল উর্বরাশক্তি থাকে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাঈম মোর্শেদ বলেন, টপ সয়েল হলো মাটির উপরের সেই অংশ যেখানে গাছপালা জন্মে। টপ সয়েল জমির প্রাণ। জমির উপরের আট থেকে দশ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। অনেকেই জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। জমির এইও ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না।
সরজমিন দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল, সুন্দরদীঘি, পামুলি ও শালডাঙ্গা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে প্রায় ৩০টি এক্সকাভেটর দিয়ে টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। এই মাটি প্রায় দুইশতাধিক ট্রাক্টর ও ১০টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে আশাপাশের ২২টি ভাটায় পরিবহন করা হচ্ছে। জমির মালিকের কাছে মাটি কাটার জন্য প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তারা কেউই সদুত্তর দিতে পারেননি।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৪টায় সরজমিন দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ, মাটিয়ার পাড়া ও খোড়ার পাড় এলাকায় কৃষি জমির মাটি ভাটায় পরিবহন করতে দেখা যায়। আশাপাশের এলাকাগুলোতেও একই চিত্র।
উদ্বেগের বিষয় হলো, দেবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২২টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ৪টির লাইসেন্স রয়েছে। বাকী সবগুলোই প্রশাসনের নাকের ডোগায় বছরের পর বছর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষি জমির মাটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করলে দুই বছর কারাদণ্ড কিংবা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা যাবে।
এইদিকে এই বিষয়ে তথ্য থাকলেও অজ্ঞাত কারণে নীরবতা পালন করছে প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য প্রদান করলেও খোঁজখবর নেওয়া হবে বলেই দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে প্রশাসন। প্রশাসনের এই নীরবতা পরোক্ষ ভাবে জমির টপ সয়েল বিক্রিকে উৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ করছে স্থানীয়সহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু খয়ের বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগ কর্তন করা পরিবেশের জন্য হুমকী এবং সম্পুর্ন বেআইনি। এভাবে মাটি কেটে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অপূরণীয় ক্ষতি করা হচ্ছে।
ইউএনও শরীফুল আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশিলদারগণ জমির মালিকদের কৃষি জমির মাটি বিক্রি না করার জন্য সতর্ক করছেন। এরপরও যদি মাটি বিক্রি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা অতি দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Posted ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta