আজ, সোমবার


৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সঠিক উপাত্ত পেতে এনবিআরের আওতায় সমন্বিত উদ্যোগ আবশ্যক

বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সঠিক উপাত্ত পেতে এনবিআরের আওতায় সমন্বিত উদ্যোগ আবশ্যক
সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিনিধি: সামষ্টিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক রফতানি বাণিজ্য। এ থেকে প্রাপ্ত আয় দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ সচল রাখে। এছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে রফতানি আয়। তবে এসব তখনই সম্ভব হয় যখন রফতানি বাণিজ্যের প্রকৃত তথ্য নিশ্চিত করা যায়। কারণ দেশ থেকে অর্থ পাচার ও লুট করার অন্যতম মাধ্যমও রফতানি। প্রকৃত তথ্য ছাড়া সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ে। বণিক বার্তার এক প্রতিবেদন দেশে রফতানি তথ্যে অসংগতি তুলে ধরেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বশেষ সাত মাসের যে রফতানি তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশ করেছে তাতে হিসাবের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের রফতানি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার পার্থক্য প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বা ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি বা সাড়ে ৫৫ বিলিয়ন বেশি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, একই সময়ে রফতানি বাবদ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি ২০ লাখ বা সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। পণ্য রফতানি ও প্রাপ্ত অর্থের এ পার্থক্য প্রতি বছরই বাড়ছে, কিন্তু পরিসংখ্যানগত তথ্যের এ অসংগতির দায় সংশ্লিষ্ট কেউ নিতে চায় না।

এটা সহজেই অনুমেয় যে রফতানি উপাত্ত নিয়ে এ জটিলতার অন্যতম কারণ তিনটি প্রতিষ্ঠানের পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ। শুরুতে উল্লিখিত দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রতি বছর রফতানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। রফতানিসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে প্রথম প্রয়োজন প্রকৃত তথ্য। আর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গেলে অবশ্যই সব প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে এসে কাজ করতে হবে এবং একটি প্রতিষ্ঠানের কাঁধে সমন্বয়ের এ গুরুদায়িত্ব সঁপে দিতে হবে।

জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রকাশ করে রফতানির বিপরীতে রাজস্ব আয়ের হিসাব। অন্যদিকে রফতানির উদ্দেশ্যে জাহাজীকৃত পণ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইপিবি। আর সে রফতানি থেকে যা আয় হয় তা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে কারো তথ্যের সঙ্গেই কারো তথ্য মেলানো যায় না।

বিশ্বের প্রায় সব দেশই রফতানি আয়ের একক তথ্য প্রকাশ করে। যা আমাদের বাংলাদেশে করা হয় ‍তিনটি উৎসের মাধ্যমে। যাদের পরিসংখ্যানগত অমিলের আকার দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এর পেছনে দায়ী। শিগগিরই এদের সমন্বয় সাধন করা না গেলে রফতানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

রফতানি আয়ের তথ্য সমন্বয় করা গেলে তথ্যের জটিলতা কমে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে রফতানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন করতে হয়। কোনো রফতানিকারক অর্থের প্রত্যাবাসন করতে ব্যর্থ হলে বা বিলম্ব হলে সে বিষয়ে যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে সময় বেঁধে দেওয়া উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং যৌক্তিকতা উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে সব সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এছাড়া যে প্রতিষ্ঠান রফতানির তথ্য প্রকাশের দায়িত্বে থাকবে সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সব প্রতিনিধির উপস্থিতি থাকতে হবে এবং নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না। নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে রফতানি আয়ের প্রত্যাবাসন তদারকি এবং বিরাজমান জটিলতা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।

রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত অর্থ লুট ও পাচার। অবশ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখিয়ে এবং রফতানির ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়। এছাড়া নকল রফতানি এলসি এবং ক্রয় চুক্তির মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ওপরও নজরদারি ও তদারকি জোরদার করতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। অর্থ পাচার রোধ না করা গেলে কখনই রফতানির প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা সম্ভব হবে না। তাই বিষয়টিতে জোর দেয়া উচিত। পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বিদেশে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি।

সঠিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে রফতানি আয়ের পরিপূর্ণ তথ্য একান্ত প্রয়োজন। সমন্বিতভাবে রফতানি আয়ের মূল স্বরূপ প্রকাশ পেলে পরিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা সহজ হবে। এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির মিলিত উদ্যোগে রফতানি খাতের সমস্যা অদূরভবিষ্যতে দূর হবে বলে আশা করা যায়।

তবে সমন্বয় সাধনে কোন প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, সে প্রশ্নের অবকাশ রয়েই যায়। প্রাথমিকভাবে এনবিআর সমন্বয়ের একক দায়িত্বটি গ্রহণ করতে পারে। কেননা তাদের আওতাধীন কাস্টমসের মাধ্যমে রফতানি পণ্যের চালান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কাস্টমস সংশ্লিষ্ট নথির সঙ্গে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে কাজটি করে থাকে। যদিও দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। কারণ তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেন হয়। ফলে প্রকৃত রফতানি আয়ের হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে দেয়া সম্ভব।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com