আজ, রবিবার


৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদেশি ঋণনির্ভর বাজেট: ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
বিদেশি ঋণনির্ভর বাজেট: ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের
সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্টাফ রিপোর্টার:

বেসরকারি বিনিয়োগ,কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃত্তিতে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেজন্য নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছে সরকার। তবে বৈদেশিক ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাকে বিবেচনায় নিয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের ভারসাম্য বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বাজেটের আকার কমিয়ে ধরা সত্ত্বেও আসছে বছর বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেটা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য চলতি বছরের গত আট মাসে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে ৪.১৩ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২০ টাকা হারে ধরা হলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংক থেকে যতটা কম ঋণ নেওয়া যায় সে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী বছর ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।

তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যা ছিল ৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সাত বছরে এ ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ সময়ে সরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। বেসরকারি খাতে তা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের মোট ঋণের ৮৪ বিলিয়ন ডলারই নিয়েছে সরকার। বাকি ১৯ বিলিয়ন ডলার নিয়েছে বেসরকারি খাত।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ঋণ নেওয়ার এই গতিতে অব্যাহত থাকলে অর্থনীতি চাপের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। তাই বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্ত হয়। আবার বেশি করে বিদেশি ঋণ নিলে সেটা পরিশোধেরও চাপ বাড়ে। ফলে সামস্টিক অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতে হলে দেশি-বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের এখন বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে চাপ সেটা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণই বলা যায়। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের (২০২৪) জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গত বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়, চার বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার হতে পারে। এ বাজেট থেকেই ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আগামী অর্থবছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে এ ঋণ নেওয়া হবে।

বাজেট ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের আশপাশে রাখা হয়। কখনো ৫ শতাংশের একটু বেশি থাকে বাজেটঘাটতি, কখনো বা ৫ শতাংশের কম। তবে আগামী অর্থবছরে বাজেটঘাটতি ৪ দশমিক ২ শতাংশ রাখা হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। অর্থবিভাগ মনে করে, আগামী অর্থবছরে বাজেটঘাটতি ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে থাকলে সাড়ে ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com