মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের গ্যাসের পরিমাণ সংক্রান্ত বিতর্ক যাচাই করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই চিঠি যাচ্ছে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে।
মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের নির্ধারিত পরিমাণ গ্যাসের বিল আদায় করা হয়। গ্রাহক ব্যবহার করুক, না করুক অথবা বেশি ব্যবহার করলেও এক চুলা ৫৫ ঘনমিটারের বিল এবং দুই চুলা ৬০ ঘনমিটারের বিল দিতে হয়। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দাবি হচ্ছে, তারা কোথাও কোথাও ৯০ ঘনমিটার ব্যবহারের তথ্য পেয়েছেন। সে কারণে এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার করার আবেদন দিয়েছে।
তিতাস বলে আসছে, মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকরা বেশি ব্যবহার করছে। সে কারণে তাদের সিস্টেম লস বেড়ে যাচ্ছে। তিতাসের ওই আবেদনটি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা হয় ২০২৩ সালের মার্চের দিকে। তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে রশি টানাটানি চলছে। বিইআরসি একটি অভ্যন্তরীণ কমিটির মাধ্যমেও কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারেনি। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিইআরসি, পেট্রোবাংলা ও তিতাসের যৌথসভায় তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সারাদেশে প্রায় ৪৪ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে, তার মধ্যে ৫ লাখের মতো প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন।
বেশিরভাগ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গড়ে ৩০ ঘনমিটারের কম গ্যাস ব্যবহার করছেন প্রিপেইড গ্রাহকরা। শুধু সেই পরিসংখ্যান নয় ২০১৯ সালে বিআইডিএসকে (বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) দিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে বিইআরসি। মূল লক্ষ্য ছিল আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও মিটারবিহীন গ্রাহকদের ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করা। রিপোর্টে দেশের ৬টি কোম্পানির গ্রাহকের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
১৩ জেলার ১০৫৪ আবাসিক গ্রাহকের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, একক চুলার প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকরা ৩৫.৫ ঘনমিটার ও দুই চলার গ্রাহকরা ৫৯.৩ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছে। গড়ে ৫৭.৯ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেছেন মিটার ব্যবহারকারীরা। আর ননমিটার গ্রাহকরা গড়ে ৫৬ মিটার গ্যাস ব্যবহার করেছেন।
তিতাস গ্যাস ওই রিপোর্টের সঙ্গে একমত না। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকরা অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ ঘনমিটার পর্যন্ত গ্যাস ব্যবহারের রেকর্ড পাওয়া গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও ননমিটার গ্রাহকের ব্যবহারের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক অনেকটা মিতব্যয়ী হন। তাই তাদের ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কম হয়ে থাকে। প্রিপেইড মিটার রয়েছে অভিযাত এলাকায়। তারা অনেক সময় হোটেল-রেস্তোরাঁ গিয়ে খেয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে তুলনা করলে চলে না।
বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয় ২০২২ সালের ৫ জুন। ওই আদেশের পুর্বে গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।
বিইআরসির তৎকালীন সদস্য (গ্যাস ২০২২) মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪কমকে বলেছেন, তিতাস গ্যাসের দাবি সত্য নয়। আমারতো মনে হয় ৫০ ঘনমিটারের নিচে করা উচিত ছিল। তাদের যে সাড়ে ৩ লাখ প্রিপেইড মিটার ছিল (ওই সময়) সেখানে দেখা গেছে গড়ে ৪৫ ঘনমিটারের কম ব্যবহৃত হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের বিলের তথ্য দেখলেই বুঝতে পারা যায়। বিষয়টির জন্য রকেট সায়েন্স জানা দরকার হয় না।
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিষয়টি বুয়েটকে দিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিতাস গ্যাসের পাশাপাশি সম্প্রতি শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে চট্টগ্রাম সিটিতে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কেজিডিসিএল ও কুমিল্লা, চাঁদপুর এলাকায় বিতরণের দায়িত্বে থাকা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ঘুরিয়ে আবাসিকের বিল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
কোম্পানিগুলো বলেছে, সব মিটারবিহীন গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী-২০১৪ অনুযায়ী একক ও দুই চুলার গ্যাস ভোগ নির্ধারণ করা হলে তা প্রকৃত গ্যাস ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। গ্যাস বিপণন নিয়মাবলীতে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার বিলের কথা বলা হয়েছে। ওই প্রস্তাব কার্যকর হলে এক চুলার বিল ৯৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩২১ টাকা এবং দুই চুলা ১৩৯৩ টাকা হবে।