আব্দুল্লাহ আল লোমান, জামালপুর থেকে : বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে যমুনা তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানি ইউনিয়নের খোলাবাড়ি এবং ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ও বেলগাছা ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে বালুর ব্যাগ ফেললেও ভাঙন থামানো যাচ্ছে না।
ভাঙন আতঙ্কে ইতোমধ্যেই সহস্রাধিক পরিবার বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। গত এক মাসের দেওয়ানগঞ্জে ভাঙনে শতাধিক বসতবাড়ি ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলাবাড়ি বাজারের সিংহভাগ যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকীর মুখে পড়েছে সদ্য নির্মিত বাহাদুরাবাদঘাট নৌথানা। তাই ভাঙনরোধে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়,বৃষ্টিতে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট ভাঙনরোধে পাউবো’র আপদকালীন তহবিল থেকে জেলার ৩টি জায়গা নির্ধারণ করে প্রতিটিতে বালুর (জিও) ব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক গত দুই সপ্তাহ থেকে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে,চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এলাকায় যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক মাসের ভাঙ্গনে খোলাবাড়ি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ও খোলাবাড়ি বাজারের সিংহভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে খোলাবাড়ি গ্রামের প্রায় দুইশ’ পরিবার। বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটাবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে এসব পরিবার। হুমকীর মুখে পড়েছে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাহাদুরাবাদঘাট নৌ-থানা।
অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাজলা ও কাটমা গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায়২০-২৫টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে তারা এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বৃহস্পতিবার দেওয়াগঞ্জের খোলাবাড়ী এলাকায় সরেজমিনে গেলে নদী ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্থরা বলেন, প্রায় এক বছর থেকে যমুনার ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩টি গ্রাম ২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলাবাড়ি বাজারের সিংহভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে যে বালির বস্তা ফেলছে তা কোন কাজে আসছে না। খোলাবাড়ি ও আশপাশের এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।
চিকাজানি ইউনিয়নের খোলাবাড়ি এলাকার আমির হোসেন (৭৫) বলেন,“আমার বয়সে ১৫ বার বাড়ি ভাংছি। প্রতিবছর ভাঙ্গার কারনে আমাদের জমাজমি, স্কুল-মাদ্রাসা সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শক্তিশালী বাঁধ দেওয়া না হলে বালুর বস্তা ফেলে কোনো কাজ হবে না ”।
একই এলাকার শফিকুল মিয়া নামে এক বৃদ্ধা বলেন ,“ নদীর স্রোত অনেক শক্তিশালী তাই এখানে বালুর বস্তা ফেলে কোনো কাজে আসছে না। বালুর বস্তা ফেলার কয়েকদিন পরেই ভাঙন শুরু হয়। যে ভাবে নদী ভাঙছে তাতে মনে এবার নৌথানা রক্ষা পাবে না।”
সেখানকার বাসিন্দা মো. আব্বাছ আলী বলেন, “নদীর গর্ভে আমার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব। কোথায় যাবো, কার কাছে হাত পাতবো কিছুই বুঝে আসছেনা। আসলেই আমাদের সবার কপাল পুড়া।”
ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের ফজলু মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,“যা ছিল সবকিছু নদীতে চলে গেছে, আমরা এখন বউ পোলাপান নিয়ে কোথায় থাকবো।কেউ আমাগরে খোঁজখবরও নেই না। আমরা কি মানুষ না।”
বালুর বস্তা ডাম্পিং এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সোলার কনষ্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন , “ভাঙন ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে কাজের পরিধি বৃদ্ধি না করলে এই বস্তা কোনো কাজে আসবে না। কাজের পরিধি বৃদ্ধি করলে নৌ থানাকে ভাঙন থেকে বাঁচানো যাবে ”।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়ী ও ইসলামপুরের কাজলা এবং কাটমায় ১৪০ মিটার এলাকায় ১২ হাজারের অধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চলছে। এছাড়া খোলাবাড়ি থেকে ফুটানী বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হবে। প্রকল্পটি পাস হলেই স্থায়ী বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।”