নিজস্ব প্রতিনিধি: পাট আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের অংশ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অবদান বিবেচনায় একসময় সোনালি আঁশ হিসেবে এর পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য মোট রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাকশিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে। রুগ্ণ হতে থাকে পাটশিল্প। বর্তমানে এ খাতে আমাদের রপ্তানি আয় অনেক কম। এরই মধ্যে দেশি পাটের জীবনরহস্য উম্মোচনের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উম্মোচন করেন তারা। ২০১৭ সালে পাটের আঁশের মান, দৈর্ঘ্য ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী চারটি জিনের পেটেন্ট (কৃতিস্বত্ব) পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বিশ্বের যে কোনো স্থানে পাট নিয়ে গবেষণা হলে বাংলাদেশ অর্থ পাবে। এ খবর নিশ্চয় আশা-জাগানিয়া।
কিন্তু সে অর্থে আমরা পাটশিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারছি না। পাটকলগুলো বন্ধ এবং বকেয়া পাওনার দাবিতে প্রায়ই শ্রমিকাদের নামতে হচ্ছে রাজপথে। পাটশিল্পের উন্নয়নে এসব সংকট নিরসন জরুরি। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাফল্যের দেখা পেয়েছে। পাটকলগুলোর ব্যবস্থাপনায় সে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না, সে বিষয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে। আমরা বিগত কয়েক বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। স্বীকার করতে হবে এটি সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে। এলডিসি উত্তরণের পর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেতে হবে দেশকে। এ অবস্থায় একক কোনো পণ্যে অতিনর্ভরতা ঠিক নয়Ñকখন কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি আসে। প্রতিযোগীরা বসে নেই, কে কাকে কীভাবে অতিক্রম করবে, সেজন্য নিত্য তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এ অবস্থায় রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাটশিল্পকে যুগোপযোগী করা গেলে অর্থনীতিতে পাট খাতের অবদান বাড়বে বলেই ধারণা।
গতকাল শনিবার ‘বাণিজ্যমেলায় পাটপণ্যে মুগ্ধ ক্রেতা-দর্শনার্থী’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিবেদক জানান, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৮তম আসরে পাটের তৈরি নানা পণ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন মেলার ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। সেইসঙ্গে সুলভ মূল্যে এসব পণ্য কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। অনেকটা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের আদলে করা হয়েছে পাটপণ্যের এবারের প্যাভিলিয়ন। এ কারণে ক্রেতাদের মনে আরও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মেলায় পাটের তৈরি স্কুলব্যাগ, কার্পেট, জুতা, ঘরের সাজসজ্জার বিভিন্ন জিনিস, ঝুড়ি, চুড়ি, ব্যাগসহ অনেক পণ্য রয়েছে।
কেবল দেশের ক্রেতাদের মুগ্ধ করে পাটপণ্যের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এটি ছড়িয়ে দিতে হবে বহির্বিশ্বে। তা করা গেলে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে এবং উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। পাটশিল্পের সঙ্গে দেশের লাখো কৃষক-শ্রমিক জড়িত। পাটকলের আধুনিকীকরণে কী লাভ, যদি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল জোগান দেয়া সম্ভব না হয়। তাই পাটের উৎপাদন বাড়াতে হবে। চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়াতে পাট উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাটশিল্পের উন্নয়নে সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বন করা হবে বলেই প্রত্যাশা।