আব্দুল্লাহ আল লোমান, জামালপুর থেকে :
“ঘরের ভেতর বুক সমান পানি সাতারও জানিনা, এই বাচ্চা নিয়ে সারাদিন বেড়াবার লাগছি একটু ঠাঁই পাওয়ার জন্য, কেউ একটু বোগলো আওজায়ে (স্থান) নিল না। যে ভাবে পানি ভাড়তাছে (বৃদ্ধি) রাতে মনে হয়, ঘরে খারোয়ে থাহা যাবে না। এদিকে ঘরে খাবারও নাই,কেউ আমাদের খোঁজখবরও নেয়না। অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের পশ্চিম বাবনা গুনাপাড়া গ্রামের বিধবা তোলা নামের বৃদ্ধা মহিলা এ প্রতিবেদককে বলছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় সরেজমিনে গেলে তিনি এভাবেই তার কষ্টের কথা প্রকাশ করেন।
বৃদ্ধা তোলা বেওয়া আরও বলেন, “ আমার ঘরের মধ্যে কোন শুকনো খাদ্য জিনিসও নেই, সহাল থেকে বাহি মুহে আছি এখন (বিকাল সাড়ে চারটা) পর্যন্ত। শুধু এ বাচ্চার (বেপির ঘরের নাতি) জন্যই আমি আছি মহা বিপদে।
বন্যা কবলিত এলাকায় বৃদ্ধা তোলার মতো হাজারও মানুষ কষ্টে পড়েছেন। তার মতোই একই গ্রামের মমতাজ বেওয়া, আকলিমা,জয়বান ও কহিল উদ্দিনসহ আরও অনেকেই বললেন কষ্টের কথা।
মমতাজ বেওয়া বলেন, “ছবি তুলে যাদেরই লাভ তাদেরি হয় আমরা কিছুই পায়না। আননেরা আর হুদাই ছবি তুইলেন না। আমগরে খিদা সয্য হয়, গরু ছাগল পোলাপাইনদের দিক চাইলে আর ভাল লাগেনা।”
জানা গেছে, জামালপুরের প্রথম দফার রেকর্ড ভেঙে গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি ৪৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। সংকটে পড়েছে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের। জেলার ৭টি উপজেলার সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাত্র ১৫৪ মেক্ট্রিক টন জিআর চাল, শুকনো খাবার ও গো-খাদ্য বাবদ আড়াই লাখ টাকা পর্যায় ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানা উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু।
Developed by: Engineer BD Network