নিজস্ব প্রতিনিধি: তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। গতকাল জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ ছিল সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গতকাল দেশের ২২ জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, ফেনী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা।
দিনাজপুরের আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গতকাল সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বনিম্ন। তবে ২৮ জানুয়ারি জেলায় চলতি শীত মৌসুমের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল তেঁতুলিয়ায় ৫ ডিগ্রি।
ঘন কুয়াশার কারণে দুপুরেও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। শীত ও কুয়াশায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। বিবর্ণ হচ্ছে বোরো বীজতলা, নষ্ট হচ্ছে আলুখেত। জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছে বিভিন্ন গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীরা। ভারী কাপড়, পাটের বস্তা গবাদি পশুর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টয় ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে তিনজন ও ডায়রিয়ায় ৩৮ জন আক্রান্ত হয়। গত ১৫ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে এক হাজার ও ডায়রিয়ায় ২৭৭৯ জন আক্রান্ত হয়। তবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দিনমজুর বেলাল হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডা খুব বেশি। এ কারণে আয় কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মমতাজ হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘সকালে কনকনে ঠাণ্ডা থাকলেও দুপুরের পর রোদ ওঠায় অনেকটা স্বস্তি আসে। তবে আমরা শ্রমজীবী মানুষ সকালে কাজে যেতে না পারলে মালিক কাজে নেয় না।
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, ফেনী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, ভোলা জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।
এদিকে আজ ফরিদপুর অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামীকালের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে।