মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি:
বরিশালের মুলাদীতে কয়লা সংকটের অজুহাতে ইটভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছেন মালিকেরা। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি গাছপালার পরিমাণ কমছে। প্রশাসনের তদারকির অভাবে বৈধ-অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা উপজেলার ১৯টি ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ইটভাটা মালিকেরা কয়লা সংকটের অজুহাত দেখালেও বেশি লাভের আশায় তারা ইট পোড়াতে কাঠের ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় থেকে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী কালো ধোয়া নির্গত হয় এমন ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা এবং কোনো ইটভাটা কাঠ পোড়াতে পারবে না। এছাড়া প্রতিটি ইটভাটা ঝিকঝাক কাঠামোতে স্থাপন করে পরিবেশ দূষনমুক্ত রাখতে হবে।
মুলাদী উপজেলায় ১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার মধ্যে ৪টিতে কম উচ্চতাসম্পন্ন ড্রাম চিমনি ব্যবহার করছে। বাকীগুলোতে স্থায়ী চিমনি এবং ঝিকঝাক কাঠামো করা হয়েছে। ড্রাম ও স্থায়ী চিমনির ইটভাটায় বেশি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কয়েকটি ঝিকঝাক কাঠামোর ইটভাটায়ও কাঠ পোড়ানো হয়।
প্রতিটি ইটভাটা কিংবা সংলগ্ন এলাকায় মালিকেরা ‘স্বমিল’ বসিয়ে নিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত কমদামে কাঠ কিনে স্বমিলে চেরাই করে সহজেই ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করেন তারা। কয়লার দাম বেশি এবং কাঠের দাম কম হওয়ায় মালিকেরা কয়লা ব্যবহার করেন না বলে দাবি করেছেন ইটভাটার শ্রমিকেরা। অনেক মালিক নামমাত্র কয়লা এনে ইটভাটায় রাখলেও কাঠ দিয়েই ইট পোড়াচ্ছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা মালিক বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই ঠিকমতো কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে ইটভাটার জন্য কয়লা পাওয়া সহজ নয়। একটন কাঠের দাম যেখানে সাড়ে ৫ হাজার টাকা সেখানে একটন কয়লার দাম প্রায় ২৪ হাজার টাকা। তাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অনেকটা সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য। এছাড়া উপজেলার অধিকাংশ ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে প্রতিহাজার ইট প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়। আর কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে প্রতিহাজার ৯ হাজার টাকার বিক্রি করা সম্ভব। ক্রেতারা ৯ হাজার টাকায় ইট পেলে কেউ ১২ হাজার টাকায় ইট কিনবে না। ক্রেতা ধরে রেখে কমদামে ইট বিক্রি করতে কয়লার পরিবর্তে ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করা হয়।
এব্যাপারে মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অবৈধ এবং ইটভাটায় স্বমিল স্থাপন করে কাঠ চেরাই করার বৈধতা নেই। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিদের্শণা অমান্যকারী ইটভাটার বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।