এম শাহজাহান : আদি যুগ ছেড়ে, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আধুনিক যুগে পৌঁছেছে নতুন প্রজন্ম। বর্তমানে হারিকেন ও কুপিবাতির নাম শোনামাত্র অনেক প্রবীণ মানুষের অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। হারিকেন ও কুপিবাতি ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকের মধ্যে অন্যতম। বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন ও কুপিবাতির আলো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে হারিকেন ও কুপিবাতি।
আগেকার দিনে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আলোর জন্য ব্যবহার করতো হারিকেন ও কুপিবাতি। রাতের অন্ধকারে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে একমাত্র ভরসা ছিল হারিকেন, হাটবাজারে দোকানদারেরা বেচাকেনাও করতেন হারিকেনের আলোয়। অন্ধকার রাতে হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে রাস্তা চলার স্মৃতি এখনো অনেক মানুষ মনে করে। একসময় হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের বারান্দায় ছোট্ট শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করতো।
এখনো গ্রামের কিছু বাড়িতে হারিকেন ও কুপিবাতি পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। এখন প্রত্যেক বাড়ি, হাটবাজার, রাস্তাঘাটে দেখা যায় বৈদ্যুতিক আলো। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হারিকেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে সোলারপ্লান্ট ও বিদ্যুতের আলো। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয়তো জানবেও না হারিকেন ও কুপিবাতি কি। উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের গিলাগাছা গ্রামের বৃদ্ধ মোনতাজ আলী বলেন, আমি ছোটকালে সন্ধ্যার আগেই হারিকেনের কাচের চিমনি খুলে, ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে কেরোসিন তেল ঢেলে হারিকেন ও কুপিবাতি জ্বালানোর জন্য তৈরি করে রাখতাম। সন্ধ্যায় দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাতাম, আগেকার ওইদিন আর ফিরে আসবে না।
হারিকেনের বিষয়ে কথা হয় সাবেক প্রবীন গ্রাম্য চিকিৎসক লাল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত হারিকেনের আলোতে লেখাপড়া করেছি। হারিকেন জ্বালিয়ে বাবার সাথে হাটবাজারে যাইতাম। আগেকার পূরোণো সেই দিনগুলো অনেক আনন্দের ছিল। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে সেই হারিকেন আজ চোখে পড়েনা।
উপজেলার তিনানী বাজারের দোকানদার আজগর আলী জানান, বছর পনেরো আগে মাত্র কয়েকটা দোকান ছিল, জ্বালানি কেরোসিন তেল কিনার জন্য মানুষের সিরিয়াল থাকতো। এখন বাজারে মুদি দোকানের সংখ্যা অনেক, কিন্তু কেরোসিন তেল খুঁজে পাওয়া যায়না। বর্তমানে কেরোসিনের বদলে ডিজেল পাওয়া যায়,তা আবার ট্রলি,ভটভটি, ট্রাক্টর চালানোর জন্য কিনে নেয়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন ও কুপিবাতি এখন শুধুই স্মৃতি। বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রাম অঞ্চলের সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন, কুপিবাতি, এখন বিলুপ্ত। এর সংরক্ষণ হতে পারে বাংলার কোন এক জাদুঘরে।