মো. ইউছুপ মজুমদার : বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেছেন, প্রতিটি এনজিওর প্রকল্প যেন দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ আগষ্ট) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আয়োজিত জেলা পর্যায়ের এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেভ দ্যা চিলড্রেন, আশিকা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইপসা ও আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের করা সমীক্ষা অনুসারে বান্দরবানের মোট ৪ লাখ ৮১ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড়ি ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। অথচ দুর্যোগ মোকাবেলায় মাত্র ৩১টি পরিবারকে ক্যাশ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে, যা সংখ্যায় খুবই সামান্য। তিনি প্রশ্ন তোলেন এনজিওগুলোর বিভিন্ন আলোচনা সভা, গোলটেবিল বৈঠক কিংবা ইস্যুভিত্তিক কার্যক্রমে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, সেই সুবিধা কি আদৌ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা মানুষদের কাছে পৌঁছায়? তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থাপন করা সাবস্টেশনগুলো আসলেই কতটা টেকসই এবং প্রকল্প শেষে সেগুলোর দায়িত্ব কে নেবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করা জরুরি। সেভ দ্যা চিলড্রেনের এন্টিসিপেটরি অ্যাকশন ম্যানেজার ফাতেমা মেহেরুন্নেসা স্বীকার করেন যে প্রকল্পে সহায়তা সীমিত।
তবে তিনি জানান, সেভ দ্যা চিলড্রেনের অন্যান্য প্রকল্প থেকেও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, প্রকল্প শেষ হলে সাবস্টেশনগুলোর দায়িত্ব আবহাওয়া অধিদপ্তর নেবে এবং তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সেভ দ্যা চিলড্রেনের সিনিয়র ম্যানেজার সাইমন রহমান বলেন, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হঠাৎ ঘটে যায়। ফলে পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায়ই বুঝে উঠতে পারেন না ধস নামার সময়।
বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দ্রুত সতর্কবার্তা পৌঁছালে তারা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারবেন। তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। আলোচনায় জানানো হয়, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা ভূমিধসের আগাম সতর্কবার্তা প্রদানের লক্ষ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বাঁশখালী উপজেলায় নতুন সতর্কবার্তা অফিস স্থাপনের জন্য সাইট নির্বাচন করেছে। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ মাসব্যাপী এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলায়। এতে প্রায় ২০ হাজার ২০০ মানুষ উপকৃত হবেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম মনজুরুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ফরহাদ সরদার, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট জয়া দত্ত ও মো. সরোয়ার হোসাইন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আসিফ রায়হান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহনেয়াজ, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সনাতন কুমার মন্ডল, সেভ দ্যা চিলড্রেনের কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব’সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।