গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আবাসন প্রকল্প এলাকায় স্থাপিত সাংবাদিক গনি মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অতি বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। নেই খেলার মাঠ, পাকা সড়ক কিংবা নিরাপদ পরিবেশ। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, এমনকি শিক্ষকরাও।
২০১৬ সালে অসহায়, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। শিক্ষকের সংখ্যা ৫ জন, এরমধ্যে একজন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী এবং আরেকজন কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্মিথ জেরিন সাগর জানান, বিদ্যালয়ে প্রবেশ পথের পাশে বিশাল একটি পুকুর, যা শিক্ষার্থীদের জন্য এক ভয়ংকর মরণফাঁদ। মাঠ না থাকায় খেলাধুলা ও এসেম্বলি হয় বারান্দায়। পুকুরটি আংশিক ভরাট করা হলে মাঠ তৈরি করা সম্ভব। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং মাটির রাস্তা পাকা করা প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের সামনের পুকুরটি এতটাই নিকটে যে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা কিংবা সমাবেশে নামতে পারে না। বরং স্কুলের বারান্দাতেই পিটি ও অন্যান্য কার্যক্রম চালাতে হয়। এছাড়া, খোলা সীমানার কারণে বহিরাগত ও গবাদিপশুর অবাধ বিচরণে পাঠদান ব্যাহত হয়।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাবিব জানায়, স্কুলের সামনের বড় পুকুরের পাশ দিয়ে আসতে খুব ভয় পাই। খেলাধুলা করতে পারি না। পানিতে ডুবে যায় আমরা স্কুলে আসতে পারি না।
এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার দুই মেয়ের স্কুলে যাতায়াতে অনেক সমস্যা হয়। পুকুরের পাশ দিয়ে চলাচল করে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে গরিব মানুষ কী করবো? ভালো পরিবেশ নাই একদম।
স্থানীয় বাসিন্দা মোসা. সিলভিয়া হাসান বলেন, স্কুলে পড়াশোনা ভালো হয় কিন্তু পরিবেশ ভালো নাই। স্কুলে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও ভালো নাই। টিউবওয়েল ছিল একটাও তাও নষ্ট হয়ে গেছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক নাসরিন লিজা বলেন, আমি কৃত্রিম পা নিয়ে চলাফেরা করি। বর্ষায় বিদ্যালয়ে আসা খুব কষ্টের। মাটির রাস্তা বৃষ্টিতে ডুবে যায়। রিকশাও আসে না সহজে। এখানে দূর্ভোগের শেষ নাই।
অন্য শিক্ষক খবির হোসেন জানান, আমার দুটি কিডনি নষ্ট ছিল, স্ত্রী একটি কিডনি দিয়েছেন। দূরের স্কুলে যাওয়া সম্ভব না বলে এখানে যোগ দিয়েছি। বর্ষায় ও জোয়ারে বিদ্যালয়ের সামনের পানি জমে থাকে, ডুবে যায় রাস্তা। অনেক সময় ঘটে দূর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরিফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্যা আমরা দেখেছি। পুকুর ভরাট, খেলার মাঠ ও রাস্তা পাকাকরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নিয়েও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা চলছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে।