গনবার্তা রিপোর্ট : নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) তাদের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে— তা অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তবে এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী নয় উল্লেখ করে প্রেস উইং বলছে, আমরা দৃঢ়ভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি। গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী নয়।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, কার্যক্রম বা ব্যবসায়িক দিকগুলোতে হস্তক্ষেপ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের বিপক্ষেও আমরা ব্যতিক্রমী সংযম অনুশীলন করেছি। টেলিভিশনের টকশো ও কলামগুলোতে প্রায়ই এই সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক দাবি তুলে ধরা হয়। তারপরও আমরা কোনো সেন্সর আরোপ করিনি, কিংবা ব্যবস্থা নেইনি। আমরা অভিযোগ দায়ের করিনি, উসকানি দেয়ার পরেও লাইসেন্স স্থগিত করিনি, বরং কিছু মিডিয়ার জন্য পথ প্রশস্ত করেছি, পুনরায় প্রকাশ বা সম্প্রচারে ফিরে আসার জন্য, যা অতীতের সরকারের আমলে জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এটি স্পষ্টভাবে বাক স্বাধীনতা এবং একটি মুক্ত সংবাদপত্রের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। আরো বলা হয়, সীমিত প্রবেশাধিকারের দাবির বিপরীতে সাংবাদিকরা আমাদের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের কাছে উন্মুক্ত এবং সরাসরি অ্যাক্সেস পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তাদের আউটলেট বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণে তারই প্রতিফলন দেখা যায়।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, সংস্কারকৃত অ্যাক্রেডিটেশন পদ্ধতি নিয়ে নোয়াবের সমালোচনা শুধু ভুলই নয়, ভুল তথ্যও বটে। পূর্ববর্তী ব্যবস্থাটি গভীরভাবে আপস করা হয়েছিল, সচিবালয়ের পাসগুলো কোনো বৈধ সাংবাদিকতার কার্যকারিতা ছাড়াই ব্যক্তিদের হাতে দেয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতিবিদ, লবিস্ট এবং সুবিধাবাদী ছিলেন— যারা সরকারের নীতিকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার জন্য সুবিধাজনক অ্যাক্সেস ব্যবহার করতেন।
আমরা সেই কাঠামো ভেঙে ফেলেছি এবং এটি একটি অস্থায়ী পাস সিস্টেম দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি, যা প্রকৃত সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবাশাধিকার নিশ্চিত করবে। এই সংস্কার অ্যাক্সেসকে সীমাবদ্ধ করার বিষয়ে ছিল না, তবে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়াটির অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করেছিল। আগের নীতিমালায় সাংবাদিকদের জন্য সরকারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু অবমাননাকর ধারা সংবলিত নীতিমালা সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্ধিত নবায়নের সময়সহ নতুন করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এটাও পরিষ্কারভাবে বলতে হবে, যেসব সাংবাদিককে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তারা সরকারি নির্দেশে নয়, বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় ও কৌশলগত করপোরেট পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফলে তা করেছেন। এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নির্দেশনা বা চাপ নয়, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের প্রতিফলন। প্রেস উইং বলছে, সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্বটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এবং সরকার এবং এর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মিলিত অংশগ্রহণে করা হয়। একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশের প্রতি আমাদের অব্যাহত অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে— চলতি বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মিডিয়া সংস্কার কমিশন আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভীতিপ্রদর্শনের ভয়ে সৃষ্ট নিজ-সেন্সরশিপ হ্রাস করার জন্য একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ সহ সংস্কারের প্রস্তাব করেছিল। সরকার প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের কথা ভাবছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যদিও আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত রয়েছি, আমরা নোয়াবকে দোষারোপ করার আগে অভ্যন্তরীণভাবে দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এটি অবশ্যই তার নিজস্ব সদস্যদের কার্যক্রম পরীক্ষা করবে এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে অন্যায্য ব্যবহারের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিশেষত যখন এটি মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার অস্বীকার করা, পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা এবং কথিত অসহনীয় কাজের পরিবেশের ক্ষেত্রে হয়। একটি নাজুক ক্রান্তিকালীন সময়ের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রশাসন হিসেবে আমরা গণমাধ্যম যাতে ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ‘হ্যান্ডস-অফ’ পদ্ধতি বজায় রেখেছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে নিছক স্লোগান নয়— এটি একটি নীতি, যা আমরা ধারণ করি।
নোয়াবের উদ্বেগগুলো আরো অর্থবহ হবে, যদি তারা তথ্যের ভিত্তিতে এবং সঠিক পক্ষগুলোর দিকে পরিচালিত হয়। ঘটনাগুলোর ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে খোলামেলা অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না, বরং তারা বাংলাদেশের মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপের মুখোমুখি প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো থেকে কেবল দৃষ্টি সরিয়ে দেয়। আমরা স্বচ্ছতা, সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি এবং আমরা এই মৌলিক মূল্যবোধগুলো সংরক্ষণ ও উন্নত করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য সব স্টেকহোল্ডারদের আমন্ত্রণ জানাই।