গণবার্তা রিপোর্টার : এই অবস্থায় দেশগুলোর কূটনৈতিক বিবৃতিকে অনেকেই ‘কথার খেলা’ বলে সমালোচনা করছেন, কারণ তারা এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এবং কার্যকর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা ও মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞ চলছে। বিশ্বের ২৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু এসব দেশের তরফে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখেছে। খবর আল জাজিরা।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৮২১ জন নিহত এবং অন্তত ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৭ জন আহত হয়েছেন। এই অবস্থায় দেশগুলোর কূটনৈতিক বিবৃতিকে অনেকেই ‘কথার খেলা’ বলে সমালোচনা করছেন, কারণ তারা এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এবং কার্যকর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। ২০২৩ সালে অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য—এই ১০টি দেশের ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাণিজ্যপণ্যের তালিকায় আছে মোটরযান ও গাড়ি, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (চিপ), ভ্যাকসিন, পারফিউম ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—আয়ারল্যান্ড ২০২৩ সালে ইসরায়েল থেকে প্রায় ৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আমদানি করেছে। ইতালি ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি রফতানি করা দেশ। প্রায় ৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারের রফতানির মধ্যে ১১৬ মিলিয়ন ডলারের গাড়িও রয়েছে। ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়া দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড ও স্পেন ২০২৪ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছে। তবুও তারা ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করেনি।এছাড়া সাইপ্রাস, মাল্টা, পোল্যান্ড (১৯৮৮), আইসল্যান্ড (২০১১), সুইডেন (২০১৪), নরওয়ে ও স্লোভেনিয়া (২০২৪) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা দেশগুলো হলো—অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য। দেশগুলোর প্রতিটিই এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন এক্স-এ বলেন, ‘এই বিবৃতি বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং হামাসকে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে।‘ তাই ইসরায়েল একে প্রত্যাখ্যান করেছে।ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। তারা গাজায় খাদ্য সংকট ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জরুরি আলোচনা করেছে। চাপে পড়ে ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, তারা হামলায় ‘কৌশলগত বিরতি’ দেবে ‘মানবিক উদ্দেশ্যে’, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (স্থানীয় সময়)। এই বিরতি শুরু হয়েছে গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ ও আল-মাওয়াসি এলাকায়। কিন্তু বাস্তবে, রোববার সকালের মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৪৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত কারণে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২ শিশু। এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে দুর্ভিক্ষে, যার মধ্যে ৮৭ জনই শিশু।