
প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ৮, ২০২৫, ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ
জনদুর্ভোগ করে টাকা আয় করছে সরকার, প্রতিবাদে মানববন্ধন – বিক্ষোভ

মোঃ নয়ন :
১০ চাহার (চাকা) গাড়ি চলে। রাস্তাঘাট ভাঙা। সরকার কোনো কাম করেনা। খালি টাহা নিয়ে যায়। ধরেন আজ ১২ - ১৪ বছর কেউ মিয়া ছোয়ালপাল বিয়া দিবার পারেনা। এদেশে কেউ বিয়ে করতিও চাইনা। দিতিও চাইনা। আসা যাওয়ার খুব কষ্ট। আজ ১৫ বছর ধরে মানুষ খুব দুর্ভোগে পড়ে রইছে। বৃষ্টির কাঁদার ছয় মাস মানুষ বাড়ির তে বের হবার পারনা। ' আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক সাদেক আলী (৬০)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের উত্তর মূলগ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। একই ইউনিয়নের হিজলাকর গ্রামের তরিকুল ইসলামের স্ত্রী শিলা খাতুন বলেন, ছেলে পক্ষ মেয়ে দেখতে এসে বলেন, ' গ্রামের রাস্তা ভালোনা। পরিবেশ ভালোনা। ' এইটা বলেই বিয়ে ভেঙে দেয়। তাঁর ভাষ্য, দেড় মাস আগে সড়কের বেহাল দশার কারণে তাঁর ননদের বিয়ে ভেঙে গেছে। জানা গেছে, ২০০৬ সালে সদকী ইউনিয়নের জিলাপীতলা বাজার থেকে গড়াই নদীর বালুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার গ্রামীণ সড়ক পাকা করেন তৎকালীণ সরকার। প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি টাকার বালুরঘাট ইজারা দেয় প্রশাসন। প্রতিদিনই ২০০ থেকে ৩০০ টি বালু ভর্তি ৬ চাকা ও ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক চলে এই সড়ক দিয়ে। এতে সড়কের কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধূলাবালি আর বর্ষায় জমে থাকে কাঁদাপানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জিলাপীতলা, হিজলাকর, উত্তর মূলগ্রাম সহ আশপাশ এলাকার অন্তত ১০ হাজার নানাবয়সি মানুষ।
সড়কটি সংস্কারের দাবিতে সোমবার (৭ জু্লাই) সকাল সাড়ে ১০ টায় কুষ্টিয়া - রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের জিলাপীতলা এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। পরে ভাঙা ও জরাজীর্ণ সড়কে বিক্ষোভ করে ধানের চারা রোপন করে প্রতিবাদ জানান তারা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে অনেক আগেই। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। ভারি যানবাহন চলায় সড়কের দুইপাশে ক্যানাল সৃষ্টি হয়েছে। তাতে জমে আছে কাঁদাপানি। সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ সমাবেশ ও ধানের চারা রোপন করছেন। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটে বালু তোলা বন্ধ রয়েছে। অবৈধভাবে বালু তোলার জন্য ড্রেজিং মেশিন রাখা রয়েছে ঘাটে। এ সময় কৃষক নাজমুল হোসেন বলেন, দিন রাত মিলে শত শত বালুর গাড়ি চলে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কাঁচা নাকি পাকা সড়ক। কাঁদাপানির কারণে এই সড়ক দিয়ে অটোভ্যান, সিএনজিসহ কোনো গাড়ি আসতে চাইনা। মাথায় করে কৃষিপণ্য আনা - নেওয়া করা লাগে। এতে খরচ ও ভোগান্তি উভয়ই বেশি হয়। তিনি দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান। আব্দুর রশিদের স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ধূলাবালিতে বাড়িঘরে টিকা যায়না। নোংরা খাবার খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়িঘোড়াও পাওয়া যায়না। গর্ভবতী মহিলার কষ্টের কথা বলেও শেষ হবেনা। সদকী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ ও পল্লী চিকিৎসক ( প্রাণি) আসাদুল ইসলাম বলেন, বালুর গাড়ি চলার কারণে কার্পেটিং উঠে রাস্তার বেহাল দশা। সরকার প্রতিবছর দুই কোটি টাকার বেশি রাজস্ব নিয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার কোনো কাজ করেনা। তাঁদের ভাষ্য, জনগণ চলাচলের উপযোগী রাস্তা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বালুর গাড়ি চলা বন্ধ থাকবে। হিজলাকর উত্তর মূলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন রাস্তার বেহাল অবস্থা। চলাচলের সময় প্রায়ই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে কম আসে। দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করা হলে ভাল হতো। একাধিক বার স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন সদকীর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুইটি আবাসন ও কয়েকটি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ চলে এই সড়ক দিয়ে। মাত্র ৭০০ মিটার সড়কের কাছে অসহায় মানুষ। জানা গেছে, ভ্যাটসহ প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে জিলাপীতলা বালুরঘাট ইজারা নিয়েছেন কুমারখালী পৌর বিএনপির সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় বালু তোলা বন্ধ আছে। যেহেতু সরকার রাজস্ব আয় করছে। সেহেতু সরকারকেও রাস্তা মেরামত করতে হবে। গ্রামীণ সড়কে ভারি যানবাহন চলা নিষিদ্ধ। তবুও বৈধঘাটেের বালুর গাড়ির কারণে সড়কটিতে বেহাল দশা বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক। তিনি বলেন, সেখানে সিসি ঢালাই ছাড়া কার্পেটিং করে লাভ হবেনা। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, খানাখন্দ সড়কে কাঁদাপানি জমে জনদুর্ভোগের খবরটি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান করা হবে।
Copyright © 2025 দৈনিক গণবার্তা. All rights reserved.