স্টাফ রিপোর্টার: রুকাইয়া জাহান চমক, ছোটপর্দার গ্ল্যামারাস মডেল-অভিনেত্রী। আমরা তাকে পর্দায় দেখি নানা চরিত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি গর্জিয়াস সাজ-পোশাকে, চিনি মুখফোড় সাহসী তারকা হিসেবে।
সমাজের নানা ইস্যুতে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পিছুপা হন না তিনি। কিন্তু এসবের বাইরেও যে আলাদা এক চমক বাস করে তার ভেতরে, তারই আঁচ পাওয়া গেলো সম্প্রতি।
সেখানে তিনি একেবারেই প্রেমের কাঙাল এক মানুষ, প্রেমিকের এক বাধ্য প্রেমিকা, স্বামীপাগল এক নারী। ‘বানিজ্যিক নারীবাদ’-এর ভণিতা সেখানে ঠাঁই পায়নি।
গত ২০ জুন ছিলো চমকের বিয়ের প্রথম বর্ষপূর্তী। স্বামী আজমানের সঙ্গে শুভ্র বসনে নয়ন জোড়ানো তিনটি ছবি দিয়ে সেদিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানান চমক।
লেখেন, ‘প্রিয় স্বামী, বর, কান্ত, অধিপতি, তোমাকে আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমাদের টোনাটুনির সংসার কিভাবে এক বছর পার করে ফেললো টেরই পেলাম না। আগে আমি গোটা পৃথিবী জয় করতে চাইতাম, চাইতাম আনতে ক্রান্তি। এখন শুধু বনলতা হয়ে খুঁজি দু’দন্ড শান্তি। তোমার বুকে তোমার চোখে, ডুব দিয়ে আমি বুঝেছি, আমি তো গোটা পৃথিবী জয় করেই ফেলেছি। এই বড় ছন্নছাড়া প্রাণহীন পৃথিবীতে তুমি আমার অনেক মায়ার একান্ত পৃথিবী। আমি আমার সমস্ত ভালোবাসায় জয় করেছি তোমায়। এই ভুলে ভরা মিথ্যে আশার শহরে, তুমি আমার এক রঙিন স্বপ্ন। ক্লান্ত, ক্ষত-বিক্ষত পোর্সেলিনের শহরে, তুমি আমার রঙ-বেরঙের সংসার। প্রিয়, আমি তোমাকে ছায়াপথ সমান ভালোবাসতে চাই। আচ্ছা, ছায়াপথের দৈর্ঘ্য মাপেছে কেউ ?’
এখানেই শেষ হয়নি প্রেমিকা হৃদয়ের আর্তি! যেন ক্ল্যাসিক রোমান্টিক সিনেমার এক অংশ তৈরী করে ফেলেছেন স্বামীকে নিয়ে। সেই শর্টফিল্মটি আবর্তিত হয়েছে চমকের একটি লেখাকে পর্দায় মূর্ত করার মাধ্যমে।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘আমাদের প্রথম পরিণয় বার্ষিকীতে তোমার (স্বামীর) জন্য আমার লেখা প্রথম উপহার!’
ভিডিওতে চমক নিজের লেখাটি পাঠ করছেন আর পর্দায় ভেসে আসছে লেখার সঙ্গে মিল রেখে নানা ছায়াকল্প। আত্মতৃপ্তিতে বুদ হয়ে চমক পড়ছেন, ‘তোমার সঙ্গে একটা বছর কখন আঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে গেলো টেরই পেলাম না। মনে হচ্ছে এইতো গত রাতের কথা, সাদা রঙের শার্ট পরে কনকনে শীতে তুমি হাতভর্তি গোলাপ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছ। তুমি মুখ ফুটে না বললেও জানিয়ে দিচ্ছ কতোটা ভালোবাস আমায়। তোমার চোখে কী আছে জানি না, তবে পৃথিবীতে কোন চোখে আমার জন্য তীব্র ভালোবাসা দেখেনি।’
চমক পড়ে চলেছেন, ‘আমার মাঝে মাঝে খুব অভিমান হয়, পৃথিবীতে প্রেমিকার ডাগর ডাগর আঁখিযুগল নিয়ে যে পরিমাণ কবিতা লেখা হয়েছে সে পরিমাণ কবিতা কোন প্রেমিকের জন্য লেখা হয়নি কেন? তোমার চোখ পড়ে আমার মনে হয়েছে, প্রেমিকের মায়াভরা চোখ নিয়ে কায়কোবাদের মতো মহাকাব্য রচনা করা সম্ভব! পৃথিবীর খুব সুন্দর কয়েকটা দৃশ্যের মধ্যে একটা হচ্ছে- প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের ভালোবাসায় সিক্ত ছলছল চোখ। তোমার ওই চোখে তাকিয়ে বাকী জীবনটা আমি দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবো। একটা বছরকে মনে হচ্ছে একটা সুন্দর দিন কাটলো মাত্র। মনে হচ্ছে এই লম্বা জীবনটা একটা এক মাসের ভ্যাকেশনের মতোই কেটে যাবে।’
স্বামীর সঙ্গে সাদা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে হাত ধরাধরি করে হাটতে হাটতে চমক পাঠ করছেন, ‘এখন যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে গন্তব্য নাকি রাস্তা? আমি বলবো ‘সঙ্গী’। কোথায় যাবে? কোথা থেকে এসেছে? কতোটা দূরে যাবে? এ সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী জানো? কে তোমার সঙ্গে আছে।’
স্বামীর সঙ্গে শুয়ে-বসে খুনসুটি করতে করতে চমক তাকে বলছেন, ‘জানো? তোমার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত এক একটা উৎসবের মতো। বিকেলবেলা দু’কাপ চা হাতে নিয়ে বারান্দা দিয়ে সূর্যাস্ত দেখাটাকে মনে হয় প্যারিসের সুন্দর একটা বিকেল উদযাপনের মতো। পৃথিবীর সবচেয়ে দর্শনীয় মনোহর জায়গা হচ্ছে প্রেমিকের প্রশস্ত কাঁধ। আমার ইদানিং মনে হয়, আমি যদি মরেও যাই আমার কোন আফসোস থাকবে না। কারণ জীবনে যে ভালোবাসা আমি আশা করেছিলাম তার চেয়ে হাজারগুণ ভালোবাসা এই এক বছরে আমি পেয়ে গেছি।
শর্টফিল্মটি রচনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেছেন রুকাইয়া জাহান চমক। চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা করেছেন জুটন’স স্ন্যাপশুট।