পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের গাজকাটি এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে দাপটের সঙ্গে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে একটি প্রভাবশালী গ্যাং। স্থানীয়ভাবে 'মুসলিম গ্যাং' নামে পরিচিত এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন মুসলিম (৫৬) নামের এক ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে সক্রিয় রয়েছেন মো. হেলাল শেখ, কামরুজ্জামান, ফয়সাল ও শিপনসহ আরো অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এলাকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধ সংঘটিত করে চলেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তারা দলীয় পরিচয় ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে এলাকাজুড়ে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে। ধাপে ধাপে সরকারি জমি দখল, বনভূমি উজাড়, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, এমনকি হামলা-মামলার মতো গুরুতর অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে এই গ্যাং। জানা গেছে, দিনাজপুর বন বিভাগের আওতাধীন বটতলী বিট এলাকায় তারা বিভিন্ন সময়ে রাতের আঁধারে সরকারি গাছ কেটে আত্মসাৎ করেছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বন আইনে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও তদন্ত ও বিচার চলমান রয়েছে। জমি দখল ও অবৈধ বালু উত্তোলন গাজকাটি, টেপ্রীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এই গ্যাং চক্র দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। স্থানীয় অনেকেই জমি থেকে উৎখাত হওয়ার পর আইনি সহায়তা চেয়েও ফল পাননি বলে অভিযোগ করেন। এছাড়াও বুড়ি তিস্তা নদী থেকে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৮ কোটি টাকার প্রতারণা মামলা ‘এপেক্স লিমিটেড’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি বিক্রির আর্থিক লেনদেনের নামে চক্রটি প্রতারণা করেছে বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিজ্ঞ আমলী আদালত, ২-পঞ্চগড়-এ একটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মামলা নম্বর সিআর ৫৮/২০২৫। মামলাটির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা। মামলার চার্জশিটে হেলাল শেখসহ অন্যান্য সহযোগীদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়। পলাতক আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে সম্প্রতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের হওয়া আরেকটি মামলায় প্রধান অভিযুক্ত মুসলিমসহ হেলাল, কামরুজ্জামান, ফয়সাল ও শিপন বর্তমানে পলাতক রয়েছে। দেবীগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, তবে তারা একাধিকবার অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপন করছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ উপজেলার বটতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. মজিবুল হোসেন মারুফ বলেন, “গত জুলাইয়ে সরকারবিরোধী একটি আন্দোলনের সময় মুসলিম ও তার দলীয় অনুসারীরা আমার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে, মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আমি এই ঘটনার পর দেবীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, “মুসলিম গংদের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারতাম না। তারা চাঁদা না দিলে দোকানপাটে হামলা করত, জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমায় জড়াত, এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।” সাধারণ মানুষের দাবি: কঠোর ব্যবস্থা গাজকাটি ও টেপ্রীগঞ্জের বাসিন্দাদের একটাই দাবি, এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তারা চায়, এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আসুক এবং অপরাধীরা শাস্তি পাক।