মেহেদী হাসান সেতু, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের শান্ত জনপদ নাটকটোকা গ্রামে জমি সংক্রান্ত রাস্তার বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা যেখানে প্রাণ গেল একজন নিরীহ কৃষকের, আর রক্তাক্ত হল একটি গোটা পরিবার।
নিহত ব্যক্তি বাদশা মিয়া (৬২), একাধারে একজন অভিজ্ঞ কৃষক, পরিবারপ্রেমী পিতা এবং এই গ্রামের একজন পরিচিত মুখ। বহু বছর ধরে নিজের ফসলি জমিতে যাতায়াতের জন্য প্রতিবেশী হাফিজ উদ্দিনের সুপারি বাগানের ভেতর দিয়ে একটি রাস্তা ব্যবহার করে আসছিলেন তিনি। সেই রাস্তা একদিন আচমকা বন্ধ করে দেন হাফিজ উদ্দিন। বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয় চলার পথ। শুধু রাস্তা নয়, যেন এক কৃষকের স্বপ্ন, শ্বাস এবং স্বাধীনতাকেই তালাবন্ধ করে দেওয়া হয় সেদিন।
এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলে টানাপোড়েন। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করেই হাফিজ উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার হুমকি দিয়ে আসছিলেন বাদশা মিয়াকে।
শেষ পর্যন্ত সেই ভয়ংকর দিনটি আসে ১৬ জুন, রবিবার বিকেলে।
বাড়ির আঙিনায়, মানুষজনের চোখের সামনে ঘটে যায় বিভীষিকাময় ঘটনা। হাফিজ উদ্দিন, তার দুই ছেলে রুহুল আমিন ও রবিন হোসেন, স্ত্রী রুবিনা বেগম, পুত্রবধূ রুবিনা বেগম ও সাবিনা আক্তার একের পর এক ছুরি, লাঠি, রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাদশা মিয়ার ওপর। বাঁচার আকুতি ছিল, করুণা চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু থামেনি নির্মমতা।
রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাদশা মিয়া। প্রাণপণ চেষ্টা করেন স্ত্রী শেফালি বেগম, ছেলে সুলতান হোসেন, আত্মীয় শমশের আলী ও সাইজদ্দীন—তাঁকে বাঁচাতে। কিন্তু আক্রমণকারীরা কাউকে ছাড়েনি। সবাইকেই বেধড়ক পেটানো হয়। গোটা বাড়ি পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে। শিশুদের কান্না, নারীদের চিৎকার, আর আহতদের ছটফটানি কাঁপিয়ে তোলে গোটা এলাকা।
স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আহতদের দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। গুরুতর আহত বাদশা মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রাণে বাঁচানো যায়নি তাঁকে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, “একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে আসামী গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রামে আতঙ্ক, আতশবাঁসির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। কে বাঁচবে আর কে মরবে এই প্রশ্নে আজ থমকে গেছে নাটকটোকা গ্রাম।