
প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৫, ২০২৫, ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
একই পদে দুই দাবিদার! ইউনিয়ন যুবদলে বিটুল সংকট ঘিরে চরম ধোঁয়াশা

মেহেদী হাসান সেতু, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম জটিলতা ও বিভ্রান্তি। কারণ, ওই একটি পদেই দুই ব্যক্তি নিজেদের বৈধ দাবিদার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এতে করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার পাশাপাশি স্থানীয় যুবদলের তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে দ্বিধা, বিভক্তি ও মনঃক্ষুণ্ণতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ‘বিটুল ইসলাম’ নামের একজনকে স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নামের সঙ্গে মিলে যাওয়া দু’জন ব্যক্তি—যাদের নামই বিটুল ইসলাম—তাঁরা উভয়েই ওই পদ নিজেদের বলে দাবি করছেন। একদিকে একজন দাবি করছেন, তিনি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। অপরজন বলছেন, তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের স্বীকৃতিসম্পন্ন।
এই পরিস্থিতির সূত্রপাত হলেও তা আরও জটিল আকার ধারণ করে যখন আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে দুই বিটুল ইসলাম নিজেদের ছবি, নাম ও পদবিযুক্ত পোস্টার ছাপিয়ে এলাকায় প্রচার চালাতে শুরু করেন। পোস্টারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়ায় সাধারণ কর্মীরা হতবাক হয়ে পড়েন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা, যা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে বেশ নাড়া দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে চাইলে টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মোঃ হাসনাত রহমান তুহিন বসুনিয়া বলেন, “২ নম্বর ওয়ার্ডের বিটুল ইসলামই আমাদের কমিটির বৈধ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার নাম জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়েছে এবং সেটিই স্বীকৃত।”
তবে একই প্রশ্নে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে উপজেলা যুবদল নেতৃবৃন্দই সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।”
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. মুশফিকুর রহমান রাজু বলেন, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। কার নাম কমিটিতে আছে বা কে প্রকৃত পদধারী, তা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সঠিক পরিচয় নির্ধারণে যাচাই-বাছাই চলছে।”
দুই দাবিদারের মধ্যে এক জন বলেন, “আমি দলের হয়ে বহু বছর ধরে মাঠে-ঘাটে কাজ করেছি। ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয় থেকেছি। দলীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমি এই পদে মনোনীত হয়েছি।” অপরজন বলেন, “আমি কোনো ধরনের অস্পষ্টতা ছাড়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটির অংশ হয়েছি। দলীয় অনুমোদন এবং সিনিয়র নেতাদের অনুমতি নিয়েই আমি এ দায়িত্বে এসেছি।”
এই দ্বৈত দাবির কারণে ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিভ্রান্তি। সাধারণ কর্মীরাও বুঝে উঠতে পারছেন না—আসলে কে হচ্ছেন প্রকৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক? অনেকে বলছেন, যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না আসে, তাহলে ইউনিয়ন যুবদলে বিশৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে, যুবদলের মতো একটি সংগঠনে এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রদর্শন করে উপজেলা কিংবা জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত পদধারীকে চিহ্নিত করা এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়াই এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, এ ধরনের জটিলতা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির জন্ম দিতে পারে।
এখন দেখার বিষয়—উপজেলা বা জেলা যুবদল কতটা দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই সংকটের সমাধান নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
Copyright © 2025 দৈনিক গণবার্তা. All rights reserved.