দেশের জীবন বীমা খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানির ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালের ব্যাংক লেনদেন এবং বীমা দাবি পরিশোধের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
আইডিআরএ’র পরিচালক আহম্মদ এহসান উল হান্নান এবং সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আলম খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
কোন কোন কোম্পানির তথ্য তলব করা হয়েছে:
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স
হোমল্যান্ড লাইফ
পদ্মা ইসলামী লাইফ
প্রগ্রেসিভ লাইফ
প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ
বেস্ট লাইফ
প্রাইম ইসলামী লাইফ
যমুনা লাইফ
ডায়মন্ড লাইফ
স্বদেশ লাইফ
সানফ্লাওয়ার লাইফ
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ
গোল্ডেন লাইফ
বায়রা লাইফ
এনআরবি ইসলামিক লাইফ
আইডিআরএ সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে জীবন বীমা খাতে অনিয়ম, গ্রাহকের দাবি পরিশোধে বিলম্ব এবং আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে খাতটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে কোম্পানিগুলোর ব্যাংক লেনদেন ও দাবি নিষ্পত্তির বাস্তবচিত্র বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে দাবি পরিশোধে সময়সীমা, গ্রাহককে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ, ব্যাংক হিসাবের ধারাবাহিকতা এবং সম্ভাব্য আর্থিক অসঙ্গতি শনাক্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি কোম্পানিকে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ এই তিন বছরের জন্য তাদের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত বিবরণ এবং পরিশোধিত বীমা দাবিগুলোর তালিকা জমা দিতে হবে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
গ্রাহককে প্রদেয় বীমা অঙ্ক
দাবি দাখিলের তারিখ
দাবি পরিশোধের তারিখ
দাবি নিষ্পত্তির বর্তমান অবস্থা
আইডিআরএ’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। কিছু কোম্পানি সময়মতো দাবি পরিশোধ করে না। আবার ব্যাংক লেনদেনে অসঙ্গতি রয়েছে এমন অভিযোগও এসেছে। তাই আমরা কড়াভাবে বিষয়টি দেখছি।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়, বা তথ্য অসঙ্গতিপূর্ণ প্রমাণিত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করা হতে পারে।”
জীবন বীমা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। প্রায় ৩ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সময়মতো দাবি পরিশোধ না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আইডিআরএ’র এ উদ্যোগের ফলে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরবে এবং বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতা বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।